ছবি: ইটালি
দেশ জুড়ে লকডাউন সবে শুরু হয়েছে। ঘরবন্দি গোটা ইটালি তখন একটা নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ির বারান্দায় এসে গান গাইত। অনেকে বাদ্যযন্ত্র বাজাতেন। উদ্দেশ্য একটাই। একে অপরের পাশে থাকার বার্তা দেওয়া। যার মূল মন্ত্র ছিল ‘সব ঠিক হয়ে যাবে’। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল ইটালিবাসীর গান গাওয়ার সেই ভিডিয়ো, ছবি। কিন্তু লকডাউনের তিন সপ্তাহের মাথায় ছবিটা পুরোই বদলে গিয়েছে।
এখন আর বারান্দায় বেরিয়ে গান গাইছে না ইটালি। কারণ দেশবাসী বেশ বুঝতে পারছেন, ‘সব ঠিক হবে না মোটেও’। করোনাভাইরাসের প্রকোপে গোটা দেশে মৃতের সংখ্যা ১৪ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ১৯ হাজারের উপরে। দেশের উত্তরাংশের তুলনায় দক্ষিণের প্রদেশগুলিতে ভাইরাসের দাপট কম হলেও চরম সামাজিক ও আর্থিক অনিশ্চয়তায় ভুগছেন সেখানকার মানুষ। কারণ নেপলস, সিসিলি, ক্যালাব্রিয়া, ক্যাম্পানিয়ার মতো এলাকায় তুলনামূলক ভাবে গরিব মানুষের বাস। দোকান, হোটেল, রেস্তরাঁ দীর্ঘদিন বন্ধ। রাস্তায় লোক নেই। দিন-আনা দিন-খাওয়া মানুষগুলো তাই ভাবতে শুরু করেছেন, ভাইরাসে প্রাণ না গেলেও এ বার না-খেতে পেয়ে মরতে হবে তাঁদের। যাঁদের চাকরি ছিল, তাদের অনেকেই এখন কর্মহীন। অদূর ভবিষ্যতে কাজ হারাবেন আরও অনেক মানুষ।
সিসিলির একটি রেস্তরাঁয় কাজ করেন পারিদে ইজ়াইন নামে এক যুবক। জানালেন, লকডাউনের জন্য এ মাসে মাইনে পাননি। “বাড়িতে স্ত্রী, দুই সন্তান রয়েছে। সঞ্চিত যা ছিল, তা দিয়ে চলছে। কিন্তু কত দিন চলবে জানি না। ব্যাঙ্কের কাছে ইনস্টলমেন্ট পিছোনোর আবেদন করেছিলাম, ওরা রাজি নয়। এ ভাবে চললে খুব শীঘ্রই রাস্তায় এসে দাঁড়াতে হবে,” বললেন ওই যুবক। গৃহহীনদের খাবার জোগাতে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু অর্থ বরাদ্দ করেছে ইটালি সরকার। কিন্তু বিভিন্ন প্রদেশের প্রধানদের বক্তব্য, তা এতটাই কম যে, ওই অর্থে সকলের মুখে খাবার তুলে দেওয়া অসম্ভব।