ইমরানের জায়গায় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কে আসছেন, আপাতত সেই প্রশ্নেই উত্তাল পাকিস্তানের রাজনীতি।
ইঙ্গিতটা মিলেছিল মাসখানেক আগেই। পাক সেনা বাহিনীর সঙ্গে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সংঘাত চরমে উঠেছে। এর মধ্যেই একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে যে, সেনার সঙ্গে পাক প্রধানমন্ত্রীর মতানৈক্য এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে হয়তো আর কিছু দিনের মধ্যেই পদ ছাড়তে হতে পারে ইমরান খানকে। ইমরানের জায়গায় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কে আসছেন, আপাতত সেই প্রশ্নেই উত্তাল পাকিস্তানের রাজনীতি।
গত মাসেই প্রথম সারির কিছু পাক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধান নিয়োগ নিয়ে সেনার সঙ্গে দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের। পাকিস্তানের সেনা প্রধান জেনারেল কমর বাজওয়ার মনোনীত জেনারেল নাদিম অঞ্জুমকে পরবর্তী আইএসআই প্রধানের পদে বসাতে প্রবল আপত্তি ছিল পাক প্রধানমন্ত্রীর। তিনি চাইছিলেন, বর্তমান প্রধান ফইজ় হামিদই চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত গুপ্তচর সংস্থার মাথায় থাকুন। কিন্তু পাক সেনা বাহিনী নভেম্বরেই ফইজ়কে সরিয়ে অঞ্জুমকে বসানোর পক্ষপাতী ছিল। প্রথমে রাজি না থাকলেও গত মাসের শেষের দিকে পাক প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানায়, জেনারেল অঞ্জুমকেই পরবর্তী আইএসআই প্রধান হিসাবে নিয়োগ করতে অনুমোদন দিয়েছেন ইমরান খান। সেই মতো আগামী ২০ নভেম্বর জেনারেল অঞ্জুমের নতুন দায়িত্ব নেওয়ার কথা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা ভেবেছিলেন, হয়তো সেনা-প্রধানমন্ত্রী দ্বন্দ্বের ইতি হয়েছে সেখানেই।
কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে, আগামী ২০ নভেম্বেরই নাকি ইমরান জমানা শেষ হতে চলেছে। পাক সেনার তরফে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, ওই দিনের মধ্যেই পদত্যাগ করতে হবে তাঁকে। না হলে, পাক পার্লামেন্টে বদল আনবে বিরোধী দলগুলি। যার ফল স্বরূপ সরতেই হবে ইমরানকে। পার্লামেন্টে ইমরানের দল পিটিআইয়ের বন্ধু হিসাবে পরিচিত আরও দুই দল পিএমএল-কিউ এবং এমকিউএম-ও নাকি সঙ্গ ছাড়তে চলেছে ইমরানের। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে উঠে আসছে বিরোধী দল পিএমএল (এন)-এর নেতা শাহবাজ শরিফের নাম। সেনাপ্রধান বাজওয়ার সঙ্গে নাকি ইতিমধ্যেই বৈঠক করতে দেখা গিয়েছে শাহবাজকে। ইমরানেরই দল পিটিআইয়ের নেতা পারভেজ় খট্টাকের নামও পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শোনা যাচ্ছে।
তবে পাক সেনা বাহিনী বা প্রধানমন্ত্রীর দফতর গোটা ঘটনায় মুখে কুলুপ এঁটেছে। পাকিস্তানের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা জানাচ্ছেন, আসলে ইমরানের উপর খুবই অসন্তুষ্ট সেনা। তাঁর আমলে দেশের অর্থনীতি তলানিতে ঠেকেছে। সেই সঙ্গে তেহরিক-ই-লব্বাইক পাকিস্তানের (টিএলপি) সদস্যেরা নিজেদের নেতা সাদ রিজ়ভিকে জেল থেকে ছাড়ানোর জন্য চলতি বছরের গোড়া থেকে যে ভাবে গোটা দেশে তাণ্ডব চালিয়েছে, তা নিয়েও দেশের মানুষ প্রবল ক্ষুব্ধ। ওই অশান্তিতে প্রাণ দিয়েছেন পাক পুলিশের বেশ কয়েক জন কর্মী। অথচ তাদের দাবি মেনেই সম্প্রতি টিএলপি-র জঙ্গি তকমা সরিয়েছেন ইমরান।
এমনকি আমেরিকা, চিন, সৌদি আরবের মতো দেশের সঙ্গেও পাকিস্তানের সম্পর্ক আর আগের মতো নেই। পড়শি দেশ ভারতের সঙ্গে তো সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। সামনাসামনি তো নয়ই, পিছনের দরজা দিয়েও এই দু’দেশের আলোচনার পথ কার্যত দীর্ঘদিন বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে সেনার দৈনন্দিন কাজকর্মে নাক গলিয়ে বাহিনীকে আরও চটিয়েছেন ইমরান। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাই যে শেষ কথা তা কখনও মানতে চাননি ইমরান। তাই জেনারেল বাজওয়ার একের পর এক সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। শোনা যাচ্ছে, তাই সেনাও এ বার প্রধানমন্ত্রীকে চূড়ান্ত সময়সীমা দিয়ে রেখেছে।