আরাম: সিন্ধুঘোটকের জন্য বরফজল। হামবুর্গের চিড়িয়াখানায়। ছবি: এএফপি।
খাতায়-কলমে বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাস হল বাঙালিদের গ্রীষ্মকাল। কিন্তু তার অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় গরমে হাঁসফাঁসানি আর প্যাচপেচে ঘাম। আর ইউরোপের গ্রীষ্মকাল? ওই জুন মাসে সপ্তাহ দুয়েক। সেই সময়টা ইউরোপের বেশির ভাগ দেশের মতো জার্মানির আবহাওয়া খুবই মনোরম। সবাই তখন দিনের অধিকাংশ সময় বাড়ির বাইরে কাটাতেই পছন্দ করেন।
গত দু’বছরে আবহাওয়া অবশ্য পাল্টেছে। আগে এখানে গরমকালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়ােসর মধ্যে ঘোরাফেরা করত। কিন্তু এখন জুন মাসেই থার্মোমিটারের পারদ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়ে ফেলছে, বইছে ‘হিট ওয়েভ’। গত বছর জার্মানিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতকালেও অন্য বছরের মতো ঠান্ডা বা বরফ দেখা যায়নি। ২০১৮ সালে যেখানে মার্চ মাসেও তুষারপাত হয়েছিল, এ বছর মার্চ মাসের গড় তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। আর জুলাইয়ের শেষে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়াল!
শীতপ্রধান দেশের মানুষ এই হঠাৎ পাল্টে যাওয়া আবহাওয়ায় অভ্যস্ত নন। এখানে পাখা বা এসির ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে। আমরা যারা গ্রীষ্মপ্রধান দেশের মানুষ, আমাদের পক্ষেও এই সময়টা কষ্টকর হয়ে ওঠে। এ বছর তাপপ্রবাহে দেশের অনেক বনাঞ্চল দাবানলে নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শস্যও। ফলে বাজারে আনাজের দামও বেড়ে গিয়েছে খুব।
যখন প্রথম জার্মানিতে আসি তখন একটাই চিন্তা ছিল, বারো মাস ঠান্ডায় থাকব কী করে। প্রথম বছর তুমুল বরফ ও হাল্কা গরম পেলেও ২০১৮ থেকে আবহাওয়া অনেকটাই পাল্টে গেল। টানা দু’সপ্তাহ চলল ‘হিট ওয়েভ’। গত বছর থেকেই দেখছি, জুন মাস থেকেই শহরে কোনও দোকানে পাখা নেই, পাওয়া যায় না অনলাইনেও। ভরসা শুধু শৌখিন হাতপাখা!
শুধু গ্রীষ্ম নয়, পাল্টাচ্ছে এ দেশের শীতকালও। অন্য বারের চেয়ে অনেক কম তুষারপাত হয়েছে ২০১৮-১৯-এ। সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও নামেনি অন্য বারের মতো। আমার শহর ডার্মস্টাটে পুরো শীতকাল ধরেই বৃষ্টি পড়েছে, একটুও তুষারপাত হয়নি।
জীবনের প্রথম ভাগ কলকাতায় কাটালেও জার্মানির এই গরমে আমাদেরও হাঁসফাঁস অবস্থা। সব থেকে দুঃখের কথা, এখানে নেই গরমের ছুটি বা আমপোড়ার শরবত। একটানা গরমের পরে ছিটেফোঁটা বৃষ্টিতেই মেটাতে হয়ে কালবৈশাখীর সুখ।
লেখক ডার্মস্টাট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির পড়ুয়া