Chinmoy Krishna Das

জেলমুক্তি হবে চিন্ময়কৃষ্ণের? মঙ্গলে শুনানি বাংলাদেশের আদালতে, তাকিয়ে রয়েছেন গোটা বিশ্বের সনাতনীরা

রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামের আদালত তাঁকে জামিন দেয়নি। বর্তমানে তিনি জেলবন্দি রয়েছেন। আগামী মঙ্গলবার ফের তাঁকে হাজির করানো হবে আদালতে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:৫৮
Share:

গত সোমবার সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশ পুলিশ। —ফাইল চিত্র।

রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেফতার সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের জামিন মামলার শুনানি হবে আগামী মঙ্গলবার। গত সোমবার তাঁকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রাম পুলিশ। পরের দিন হাজির করানো হয় চট্টগ্রাম আদালতে। তবে জামিনের আর্জি সে দিন নামঞ্জুর হয়ে যায়। বিচারক তাঁকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। চিন্ময়ের মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ শুরু করেছেন সংখ্যালঘুরা। তার আঁচ পড়েছে এ পার বাংলাতেও। চিন্ময়কৃষ্ণের নাগরিক অধিকার যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে, সে বিষয়ে দিল্লি থেকেও ঢাকাকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। চিন্ময়ের পাশে দাঁড়িয়েছে ইসকনও। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য রবিবার বিশ্ব জুড়ে শান্তিপ্রার্থনার ডাক দিয়েছে ইসকন। এই আবহে মঙ্গলবার ফের বাংলাদেশের আদালতে শুনানির জন্য উঠবে চিন্ময়ের মামলা। জামিন কি পাবেন তিনি? বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা আপাতত তাকিয়ে রয়েছেন সেই উত্তরের অপেক্ষায়।

Advertisement

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য একাধিক ধর্মীয় সংগঠন মিলে গঠন করে ‘সনাতনী জাগরণ মঞ্চ’। ওই মিলিত মঞ্চের অন্যতম মুখপাত্র চিন্ময়কৃষ্ণ দাস। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ অনুসারে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর চট্টগ্রাম নিউ মার্কেট এলাকায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদিঘির মাঠে চিন্ময়ের ডাকে একটি সমাবেশ আয়োজিত হয়। প্রচুর সংখ্যালঘু মানুষ সেখানে ভিড় করেন। অভিযোগ, সে দিনেই চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট চত্বরে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার উপরে ধর্মীয় সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

ওই ঘটনার পর ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা রুজু হয়। অভিযুক্তের তালিকায় রাখা হয় চিন্ময়কেও। এর পরে গত সোমবার ঢাকা বিমানবন্দর থেকে তাঁকে আটক করা হয়। পরে তাঁকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তবে এই পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার অভিযোগ থামেনি। ‘প্রথম আলো’ অনুসারে, শুক্রবারও চট্টগ্রামে একটি মন্দিরে হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। আশপাশের বেশ কয়েকটি বাড়ি এবং দোকানেও ভাঙচুর হয়েছে বলে অভিযোগ। চিন্ময়ের গ্রেফতারির পরে চট্টগ্রাম পুলিশ ইন্ডিয়া টুডে টিভিকে জানিয়েছে, রুদ্রপতি কেশব দাস এবং রঙ্গনাথ শ্যামসুন্দর দাস নামে আরও দুই সন্ন্যাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যে মামলায় চিন্ময়কৃষ্ণকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই সংক্রান্ত তদন্তে সন্দেহভাজন হিসাবে ওই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের।

Advertisement

বাংলাদেশের বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যা থেকে রবিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত প্রায় ৫৪ জন সংখ্যালঘুকে বেনাপোল সীমান্ত পার করার অনুমতি দেয়নি সে দেশের অভিবাসন পুলিশ। ও পার বাংলার সংবাদমাধ্যমের দাবি, তাঁরা ইসকনের ভক্ত। বেনাপোলে অভিবাসন চেকপোস্টের ওসি ইমতিয়াজ মহম্মদ আহসানুল কাদের ভূইঞা জানিয়েছেন, ভারতে তাঁদের ভ্রমণ সন্দেহজনক মনে করেই ৫৪ জন বাংলাদেশি যাত্রীকে সীমান্ত পার করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

শনিবার রাতে ঢাকার কারওয়ান বাজার এলাকায় বাংলাদেশের এক মহিলা সাংবাদিককে কিছু মানুষ ঘিরে ধরেছিলেন বলে অভিযোগ। পরে তেজগাঁও থানার পুলিশ তাঁকে থানায় নিয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’কে ঢাকা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক জানিয়েছেন, ওই মহিলা সাংবাদিককে আটক করা হয়নি। নিরাপত্তার জন্য তাঁকে থানায় নিয়ে আসা হয়। ওই সাংবাদিকের নামে চারটি মামলা রয়েছে। সেগুলিতে জামিনের শর্তে তাঁকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারির পর থেকে এমন অনেক ঘটনা এবং অভিযোগ উঠে এসেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। চিন্ময় বাংলাদেশ ইসকনের প্রাক্তন সদস্য। গ্রেফতারের অনেক আগেই শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তাঁকে বহিষ্কার করেন ইসকন কর্তৃপক্ষ। তবে সংখ্যালঘুদের উপর একের পর এক অত্যাচারের অভিযোগ এবং চিন্ময়ের গ্রেফতারির পর, সংগঠনের প্রাক্তন সদস্যের পাশে দাঁড়িয়েছে ইসকন। বিবৃতি দিয়ে ইসকন জানিয়েছে, সংগঠনের সঙ্গে বর্তমানে চিন্ময়ের কোনও যোগ নেই। তবে তাঁর সঙ্গে কোনও দূরত্ব তৈরি করা হয়নি। দিল্লি থেকেও বার বার ঢাকাকে অনুরোধ করা হয়েছে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। বিদেশ মন্ত্রক থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে দিল্লি উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু-সহ প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সে দেশের সরকারের, তা-ও জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের পুলিশের হাতে সন্ন্যাসীর গ্রেফতারি প্রসঙ্গে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘‘আশা করব চিন্ময়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ বিচার হবে। তাঁর আইনি অধিকার অক্ষুণ্ণ থাকবে।’’ তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য বন্ধ হবে না বলে জানান তিনি।

ব্রিটেনের সংসদেও বাংলাদেশের পরিস্থিতির কথা উঠেছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থানের নিন্দা করেছেন ব্রিটেনের কনজ়ারভেটিভ দলের সাংসদ বব ব্ল্যাকম্যান। ব্রিটেনের সংসদে তিনি বলেন, “আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় হিন্দু মন্দির পরিচালনা করে ইসকন। তাদের ধর্মীয় নেতা (প্রাক্তন) বাংলাদেশে গ্রেফতার হয়েছেন।” লেবার পার্টি পরিচালিত ব্রিটেন সরকারকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অনুরোধ করেছেন তিনি।

ও পার বাংলায় সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্নের মুখে পড়ছে অন্তর্বর্তী সরকার। যদিও বাংলাদেশের তদারকি সরকারের বক্তব্য, সে দেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদই রয়েছেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের ‘হস্তক্ষেপ’ পছন্দ করছে না মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তদারকি সরকারের অবস্থান জানিয়েছেন ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম। রাষ্ট্রপুঞ্জেও বাংলাদেশের তরফে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের স্বাধীন ভাবে ধর্মচর্চার অধিকার রয়েছে। সংখ্যালঘু-সহ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement