সমুদ্রের পর এ বার আকাশেও আমেরিকার সঙ্গে সঙ্ঘাতে চিন। আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় মার্কিন যুদ্ধবিমানের সঙ্গে বিপজ্জনক ঘটনা ঘটাল চিনা বিমানবাহিনীর একটি ফাইটার জেট। পূর্ব চিন সাগরের আকাশে এই ঘটনায় চিনা যুদ্ধবিমানটির বিপদে পড়ার আশঙ্কা ছিল। শেষ পর্যন্ত অপ্রীতিকর কিছু না ঘটলেও চিনা বিমানবাহিনীর এই দুঃসাহসকে প্ররোচনা হিসেবেই দেখছে আমেরিকা।
মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে মঙ্গলবার জানানো হয়েছে, পূর্ব চিন সাগরের উপরে আন্তর্জাতিক আকাশসীমা উড়ছিল মার্কিন বিমান বাহিনীর একটি আরসি-১৩৫ রিকনেসাঁ এয়ারক্র্যাফ্ট। তখন একটি জে-১০ চিনা যুদ্ধবিমান অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ‘অনিরাপদ’ ভাবে মার্কিন বিমানের খুব কাছে চলে আসে।
আকাশ থেকে নজরদারি চালানো এবং নীচে অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠে বা সমুদ্রপৃষ্ঠে প্রতিপক্ষের বাহিনীর যে কোনও রকম গতিবিধির খবর রাখা রিকনেসাঁ এয়ারক্র্যাফ্টের কাজ। মার্কিন বিমান বাহিনীর আরসি-১৩৫ বিমানটি যখন সেই কাজ করছিল, তখন একটি চিনা যুদ্ধবিমান প্রবল গতিতে আচমকাই ওই বিমানের খুব কাছে চলে যায়। চিনা যুদ্ধবিমানের পাইলট নাকি অনেকটা তাড়া করার ঢঙেই মার্কিন বিমানের দিকে এগোচ্ছিল। প্রচণ্ড গতিতে চিনা বিমনটি মার্কিন বিমানের খুব কাছাকাছি যাওয়ায় যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা ছিল।
এই প্রথম অবশ্য এমন ঘটনা ঘটল না। মে মাসেও একই রকম ঘটনা চিনা বিমানবাহিনী ঘটিয়েছিল বলে পেন্টাগন জানিয়েছে। সে বার দক্ষিণ চিন সাগরের উপর টহল দিচ্ছিল একটি একটি মার্কিন ইপি-৩ বিমান। দু’টি চিনা ফাইটার জেট আচমকাই দু’পাশ থেকে ওই মার্কিন বিমানের ১৫ মিটারের মধ্যে ঢুকে পড়ে। এই দূরত্ব অত্যন্ত বিপজ্জনক। চিনা বিমানবাহিনী ইচ্ছাকৃতই এই ধরনের ঘটনা বার বার ঘটাচ্ছে বলে আমেরিকা মনে করছে।
আরও পড়ুন:
সঙ্গী বাড়ছে ভারতের, বিচ্ছিন্ন হচ্ছে পাকিস্তান, ঘোর উদ্বেগে পাক সেনা
পেন্টাগনের তরফে এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, এতে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। চিনা যুদ্ধবিমানের বিপজ্জনক গতিবিধি চিন-আমেরিকা দ্বিপাক্ষিক চুক্তির শর্তও লঙ্ঘন করছে বলেও আমেরিকা মন্তব্য করেছে। মার্কিন বিদেশ সচিব জন কেরি ইতিমধ্যেই বলেছেন, দক্ষিণ চিন সাগরের আকাশে চিন কোনও আকাশসীমা সুরক্ষা বলয় তৈরি চেষ্টা করলে আমেরিকা তাকে ‘প্ররোচনা এবং ভারসাম্য নষ্টের চেষ্টা’ হিসেবে দেখবে। কিন্তু চিন সেই পথেই এগোচ্ছে। দক্ষিণ চিন সাগরে চিনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে ফিলিপিন্স। সেই মামলার রায় খুবই শীঘ্রই প্রকাশ পাবে। রায় বিপক্ষে গেলেই আরও বেশি করে দক্ষিণ চিন সাগরে আধিপত্য কায়েমের চেষ্টা করা হবে বলে চিন স্থির করেছে। তারই অঙ্গ হিসেবে দক্ষিণ চিন সাগরের আকাশে আকাশসীমা সুরক্ষা বলয় তৈরির কথা ভেবেছে বেজিং। কিন্তু আমেরিকা যে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে, তাতে বেজিং নমনীয় অবস্থান না নিলে দক্ষিণ চিন সাগরের আকাশে চিন-আমেরিকা সঙ্ঘাত অবশ্যম্ভাবী।