চিনা জাহাজের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হবে বলে অভিযোগ। ফাইল চিত্র।
ভারতের ‘আপত্তি’ উড়িয়েই শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার বন্দরে নোঙর করেছে ‘বিতর্কিত’ চিনা জাহাজ। দীর্ঘ টালবাহানার পর অবশেষে চিনা জাহাজের প্রবেশে ছাড়পত্র দিয়েছে কলম্বো। দ্বীপরাষ্ট্রে জাহাজ নোঙর করাতে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ঠিক কী আলোচনা হয়েছে? কী ভাবে রাজি হল কলম্বো? এ নিয়ে অবশ্য মুখে কুলুপ শি জিনপিংয়ের দেশের।
এই প্রসঙ্গে চিনা বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন শুধু বলেছেন, ‘‘ইয়ুয়ান ওয়াং-৫ (চিনা জাহাজের নাম) জাহাজকে তাদের বন্দরে নোঙর করার ছাড়পত্র দিয়েছে শ্রীলঙ্কা।’’
বস্তুত, শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বন্দরে চিনা জাহাজের নোঙর করা নিয়ে বিগত দিনে আন্তর্জাতিক মহলে বেশ জলঘোলা চলেছে। এই জাহাজকে গবেষণা ও সমীক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয় বলে দাবি করা হলেও আদতে এর মাধ্যমে নজরদারির কাজ চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহলে। শ্রীলঙ্কার বন্দরে এই জাহাজের নোঙর করা নিয়ে প্রথম থেকেই ‘আপত্তি’ জানিয়ে এসেছে ভারত। সংশয় প্রকাশ করেছে আমেরিকাও। ভারত ও আমেরিকার উদ্বেগ প্রকাশের জেরে চিনা জাহাজে প্রবেশের বিষয়ে দোটানায় ছিল দ্বীপরাষ্ট্র। সে কারণে প্রথমে এই জাহাজের প্রবেশে সায় দেয়নি কলম্বো। কিন্তু পরে নিজেদের মত বদলায় তারা।
লক্ষণীয়, চিনা জাহাজের নোঙর স্থগিত করায় গত ৮ অগস্ট ক্ষোভ প্রকাশ করে বেজিং বলেছিল, এটা অন্যায়। তারা বলেছিল, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কয়েকটি দেশ কলম্বোর উপর ‘চাপ’ সৃষ্টি করছে এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে।
এর পরই গত ১৩ অগস্ট এক বিবৃতিতে শ্রীলঙ্কার বিদেশমন্ত্রক জানায় যে, ‘উদ্বেগ’ নিয়ে তারা পর্যালোচনা করেছে। তাদের তরফে আরও জানানো হয় যে, সংশয়ের জেরে ১১ অগস্ট থেকে ১৭ অগস্টের মধ্যে নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী হামবানটোটা বন্দরে চিনা জাহাজের নোঙর স্থগিত রাখা হোক। গত ৫ অগস্ট তারা চিনা দূতাবাসকে অনুরোধ করে এ কথা জানায়। সেই সঙ্গে এ-ও জানানো হয়, পরবর্তী পর্যালোচনা না হওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।
এর মধ্যেই গত ১২ অগস্ট তাদের জাহাজের নোঙরের ছাড়পত্রের জন্য নতুন করে আবেদন করে চিনা দূতাবাস। জাহাজের প্রবেশের জন্য নতুন সময় দেওয়া হয় ১৬ থেকে ২২ অগস্টের মধ্যে। পর্যালোচনার পরই শ্রীলঙ্কার তরফে এক বিবৃতিতে চিনা জাহাজের নোঙরের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, ওই জাহাজে ২ হাজার জন নাবিক রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বন্দরটি আদতে চিনেরই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে অভিযোগ। ওই বন্দরটি ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়েছে বেজিং। ভারতের তরফে জানানো হয়েছে, গোটা পরিস্থিতির উপর তারা নজর রাখছে।