পম্পেয়োর অভিযোগের পরেই মার্কিন কনসুলেট বন্ধ করল চিন— ফাইল চিত্র।
করোনা ঘিরে চিন-আমেরিকা কূটনৈতিক যুদ্ধ শুক্রবার আরও তীব্র হল। হিউস্টনের চিনা কনসুলেট বন্ধ করার জবাবে চেংদুর মার্কিন কনসুলেটে ‘তালা ঝোলানোর’ সিদ্ধান্ত নিল বেজিং। পাশাপাশি, কমিউনিস্ট চিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মঞ্চে মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়োর তৎপরতার সঙ্গে ‘পিঁপড়ের গাছ নড়ানোর বৃথা চেষ্টা’র উপমা দিল চিনা বিদেশমন্ত্রক। বৃহস্পতিবার রাতে ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি বক্তৃতায় হিউস্টনের চিনা কনসুলেটের বিরুদ্ধে সরাসরি গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ তুলেছিলেন পম্পেয়ো।
চিনা বিদেশমন্ত্রকের তরফে এদিন দক্ষিণ-পশ্চিমের শিল্পশহর চেংদু-র মার্কিন কনসুলেট বন্ধের নির্দেশ জারি করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত সমর্থন করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আমেরিকার অযৌক্তিক কার্যকলাপের বৈধ ও প্রয়োজনীয় জবাব।’’ পাশাপাশি, পম্পিও মন্তব্যের জবাবে আজ চিনা বিদেশমন্ত্রক এবং তথ্য দফতরের মুখপাত্র হুয়া চুনইংয়ের সরকারি টুইটার হ্যান্ডলে বলা হয়েছে, ‘‘ক্যালিফোর্নিয়ার রিচার্ড নিক্সন প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরিতে পম্পেওর মন্তব্য শুনে মনে হয়, তিনি নিজেকে একবিংশ শতাব্দীর জন ফস্টার ডুলস হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন। বিশ্বজুড়ে কমিউনিস্ট চিনের বিরুদ্ধে ক্রুসেড শুরু করতে চাইছেন। কিন্তু এমন প্রয়াস গাছকে নড়ানোর জন্য পিঁপড়ের প্রয়াসের মতোই নিরর্থক।’’ পঞ্চাশের দশকে প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারের জমানায় মার্কিন বিদেশসচিব ডুলস কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।
১৯৮৫ সালে চালু হওয়া চেংদু শহরের মার্কিন কনসুলেটে প্রায় ২০০ জন কর্মী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় দেড়শো জনই চিনা নাগরিক। গত মঙ্গলবার ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হিউস্টনের চিনা কনসুলেট বন্ধ করার নির্দেশ জারি করেছিল। এর পরে বৃহস্পতিবার রাতে পম্পেয়ো চিনা কনসুলেটের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ তুলেছিলেন। তারই প্রতিক্রিয়ায় আজ বেজিংয়ের এই জোড়া পদক্ষেপ।
ওয়াশিংটন ডিসির দূতাবাসের পাশাপাশি আমেরিকায় পাঁচটি কনসুলেট রয়েছে চিনের। তার মধ্যে হিউস্টনের দূতাবাসটিই কেন বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হল?
মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের মুখপাত্র মর্গ্যান ওর্তাগাসের প্রাথমিক ব্যাখ্যা ছিল, আমেরিকার বৌদ্ধিক সম্পত্তি (ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি) এবং গোপন তথ্য সুরক্ষিত রাখতেই এই পদক্ষেপ। ক্যালিফোর্নিয়ায় পম্পেয়ো বলেন, ‘‘আমরা চলতি সপ্তাহে হিউস্টনের চিনা কনসুলেট বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ এটি গুপ্তচরবৃত্তি এবং ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি চুরির কেন্দ্র হয়ে উঠছিল।’’
আরও পড়ুন: সচিনদের বিরুদ্ধে এখনই কোনও পদক্ষেপ নয়, আস্থাভোটের তোড়জোড় গহলৌত শিবিরে
অভিযোগ, মঙ্গলবার হিউস্টনের চিনা কনসুলেটের পিছন দিকে রাখা একটি ডাস্টবিনে আগুন জ্বালানো হয়েছিল। সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেন অনেকে। তাতে দেখা গিয়েছে, কয়েকজন ডাস্টবিনের ওই আগুনে কাগজপত্র এনে ফেলছেন। পরে তাঁরা জল দিয়ে ওই আগুন নিভিয়ে দেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলেও দূতাবাস কর্তৃপক্ষ তাদের ঢুকতে অনুমতি দেননি। ইতিমধ্যেই মার্কিন বিচারবিভাগ দু’জন চিনা হ্যাকারের বিরুদ্ধে করোনা ভ্যাকসিন গবেষণাকেন্দ্রগুলির তথ্য হাতানোর অভিযোগে পদক্ষেপ করেছে। ওই দুই হ্যাকারের সঙ্গে হিউস্টনের চিনা কনসুলেটের যোগাযোগের অভিযোগও উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন: হিউস্টনের চিনা দূতাবাস বন্ধ করতে নির্দেশ ট্রাম্প সরকারের
চেংদুর মার্কিন কনসুলেট বন্ধের কূটনৈতিক সাফাই দেওয়ার পাশাপাশি আজ চিনা বিদেশমন্ত্রক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সহজ করারও আহ্বান জানিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের কাছে। চিনের মূল ভূখণ্ডে আমেরিকার পাঁচটি কনসুলেট রয়েছে। হংকংয়ে রয়েছে আরও একটি।