মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়ো। ছবি: রয়টার্স।
চিনকে বিশ্বের নতুন বিপদ বলে বর্ণনা করে এশিয়ায় বাড়তি সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিল আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়ো জানিয়েছেন, ইউরোপে তাঁদের প্রধান ঘাঁটি জার্মানি থেকে বাহিনী সরিয়ে এশিয়ায় মোতায়েন করা হবে। চিনের সরকারি মুখপত্র অবশ্য মার্কিন তৎপরতাকে অবাঞ্ছিত বলে বর্ণনা করে মন্তব্য করেছে— ভারতের বোঝা উচিত, আমেরিকা কোনও দিন তাদের বন্ধু হবে না। এ বিষয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর উপদেষ্টা সুধীন্দ্র কূলকার্ণীকে উদ্ধৃত করে বেজিংয়ের সরকারি সংবাদপত্রটি বলেছে, ভারতের উচিত হবে না আমেরিকার উস্কানিতে চিনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করা।
জার্মান মার্শাল ফান্ড-এর ভার্চুয়াল সম্মেলন ‘ব্রাসেলস ফোরাম-২০২০’-র বক্তৃতায় ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন আঞ্চলিক সামরিক দষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করেন মার্কিন বিদেশসচিব। তিনি দাবি করেন, “বিশ্বের নতুন বিপদটি এখন এশিয়ায় মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। একটি দেশের সামরিক আগ্রাসনে এখন বিপদের মুখে ভারত, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, সাউথ চায়না সি, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিন্স। হ্যাঁ, আমি কমিউনিস্ট চিনের কথাই বলছি।” বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ ছড়ানোর জন্যও চিনকে দায়ী করেন মার্কিন বিদেশসচিব। চিনের পিএলএ (গণমুক্তি ফৌজ)-এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উদ্দেশ্যে আমেরিকা সামরিক পরিকাঠামো পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্ত বিবেচনা করছেন বলে জানান পম্পেয়ো। ইউরোপে মার্কিন সেনাদের প্রধান ঘাঁটিটি জার্মানিতে। পশ্চিম এশিয়াতেও সেখান থেকেই বাহিনী যাতায়াত করে। পম্পেয়ো জানিয়েছেন, জার্মানিতে সেনা সংখ্যাটা ৫২ হাজার থেকে কমিয়ে ২৫ হাজার করা হচ্ছে। এশিয়ার যে সব জায়গায় স্বল্প পরিকাঠামো রয়েছে, সেখানে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন হবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশেই যে বাহিনীর এই পুনর্বিন্যাস, তা-ও জানিয়েছেন তাঁর বিদেশসচিব। প্রশ্ন উঠেছে, একটা সময়ে সোভিয়েত সমরশক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাতেই জার্মানিতে বড় বাহিনী রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হয় আমেরিকাকে। ইউরোপে এখনও মার্কিন স্বার্থকে টক্কর দেয় রাশিয়া। জার্মানি থেকে সেনা সরানোয় রাশিয়ার সুবিধা হবে, এই যুক্তি তুলে অনেকে ট্রাম্পে সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। পম্পেয়ো জানান, আপাতত চিনের পিএলএ-কেই বড় বিপদ বলে মনে করছে মার্কিন সরকার। পম্পেয়ো বলেন, “রাশিয়া বা যে সব শক্তি আমেরিকার বিরোধিতা করে, এমন নয় যে মুখের উপর সেনা বসালেই তারা সে কাজে ক্ষান্তি দেবে। বিষয়টি বাস্তবতার নিরিখে ভাবতে হয়।”
আরও পড়ুন: সংক্রমণ বেড়ে চলেছে আমেরিকায়
গালওয়ানে ভারত-চিন সেনা-সংঘর্ষের পরে মার্কিন প্রশাসন উভয় পক্ষকে সংযত থাকার কথা বললেও পম্পেয়ো চিনের দিকে আঙুল তুলে বলেছিলেন, “কমিউনিস্ট চিনের আগ্রাসী মনোভাবেই ভারতের সঙ্গে সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।” এর পরেই চিন দাবি করে, আমেরিকার উস্কানিতে সীমান্তে সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকা অযাচিত ভাবে ঝামেলা পাকানোর চক্রান্ত করেছে বলেও অভিযোগ তোলা হয় চিনের সরকারি মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসে। পত্রিকাটির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সুধীন্দ্র কূলকার্ণী বলেছেন, আমেরিকা বনাম চিনের কৌশলগত লড়াইয়ে ভারতের উচিত কোনও পক্ষ না-নেওয়া। কিন্তু মোদী সরকার আমেরিকার পক্ষ নিয়েছে। চিনের সঙ্গে সৌহার্দ্য ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানোর পথে হাঁটলে এই সঙ্কটকালে ভারতের অর্থনীতি লাভবান হতো বলে মনে করেন কূলকার্ণী।