হাসপাতালে শামিম। রয়টার্স।
‘‘চোখের সামনে ছেলেটাকে তিলে তিলে মরতে দেখে বুক ফেটে যায়। ওকে পুরোপুরি সারিয়ে না তুলে ফিরব না।’’ হাড় জিরজিরে শামিমের দিকে তাকিয়ে বলছিলেন মহম্মদ ইউসুফ।
ইয়েমেনের প্রত্যন্ত তাইজ় গ্রাম থেকে ১৫ ঘণ্টা বাসে চেপে রাজধানী সানায় পৌঁছেছেন ইউসুফ আর তাঁর স্ত্রী ফাদিহা। ছ’বছরের ছেলেটার ওজন ছ’কিলোগ্রামেরও কম। চিকিৎসকদের পরিভাষায় যাকে বলে ‘সিভিয়র অ্যাকিউট ম্যালনিউট্রিশন’। এর আগে ওঁদের দুই সন্তান মারা গিয়েছে ছ’মাস আর চার মাস বয়সে। তারাও অপুষ্টিতে ভুগছিল। এ বার অবশ্য আশার কথা শুনিয়েছেন শামিমের চিকিৎসক আবদেলমালেক মোহম্মদ। এ যাত্রায় হয়তো শামিমকে বাঁচিয়ে তোলা যাবে। কিন্তু সানার হাসপাতালের মাস দু’য়েকের চিকিৎসা তো যথেষ্ট নয়। বাড়ি ফিরেও ছেলেটাকে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে হবে। টাকা কোথায়?
গত পাঁচ বছর ধরে গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত ইয়েমেন। তার উপরে বন্যা আর ঘনঘন পঙ্গপালের উপদ্রব। কাজ নেই, অর্থ নেই, চিকিৎসা নেই, খাবার নেই। তাইজ়ের গ্রামে কৃষি শ্রমিকের কাজ করতেন ইউসুফ। দীর্ঘ যুদ্ধের জেরে জ্বালানি ফুরিয়েছে দেশে। জিনিসের দাম আগুন। সেচের জন্য পাম্প চালানোর সামর্থ্য নেই মালিকের। ফলে গত বছর থেকে কাজ নেই ইউসুফের। এখন ত্রাণই ভরসা। স্বস্তি নেই তাতেও। তিন বছর ধরে সৌদি বিরোধিতায় আকাশ, জল, মাটি— সব পথ অবরুদ্ধ। ফলে বিদেশ থেকে ত্রাণ পাঠালেও তা সব সময়ে পৌঁছয় না। এক বেলা আধপেটা খেয়ে বাঁচাই অভ্যেস হয়ে গিয়েছে ইউসুফদের।
ইয়েমেনে এখন ৮০ শতাংশ মানুষ ত্রাণের ভরসায় বেঁচে আছেন। আধপেটা খেয়ে বা না-খেয়ে। ও দেশে এখন ঘরে ঘরে শামিমের মতো শিশুরা ধুঁকছে। সানার হাসপাতালে শিশু চিকিৎসা বিভাগের বিছানায় এমন কাতারে কাতারে ক্লান্ত, পাঁজর বার করা, বিস্ফারিত চোখ আর লিকলিকে শিশুরা শুয়ে। অপুষ্টির পাশাপাশি ডায়েরিয়া আর ডিপথেরিয়ার প্রকোপও রয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইয়েমেনে প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে এক জন অপুষ্টির শিকার।
গত মাসেই সংগঠনের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, ‘‘ইয়েমেনে ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ আসতে চলেছে। গত কয়েক দশকে যা পৃথিবীর মানুষ দেখেনি। দ্রুত পদক্ষেপ না-করলে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হবে।’’ রাষ্ট্রপুঞ্জ মনে করছে, আগামি ছ’মাসে ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ দেখবে ইয়েমেন। তবে আবদেলমালিকের মতো চিকিৎসকদের মতে, সেই দিন আসতে দেরি নেই। ইয়েমেনে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।