আজকাল সন্তানের শিক্ষাদানপর্ব যথেষ্ট ব্যয়বহুল। এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে দেশ অনুযায়ী খরচের তফাতটা আকাশ-পাতাল। সম্প্রতি জেফরিস নামে আমেরিকার একটি আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা এ নিয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছে। তাদের গবেষণায় উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে ১৪টি দেশের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই তালিকার শীর্ষে দক্ষিণ কোরিয়া।
দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৮ বছর পর্যন্ত কোনও শিশুকে লালনপালন করতে অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়। দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি-র নিরিখেই এই হিসাব কষে জানিয়েছে গবেষক সংস্থাটি।
উল্লেখযোগ্য ভাবে এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ‘সমাজতান্ত্রিক’ দেশ চিন। তার পর ইতালি। ১৮ বছর পর্যন্ত সন্তানের লালনপালনে ব্যয়বহুল দেশের তালিকায় জার্মানি এবং জাপানের মাঝখানে রয়েছে আমেরিকা।
চিনে সন্তানের জন্ম দিতে সে ভাবে কোনও খরচ নেই। তবে তাকে বড় করে তোলা এবং শিক্ষাদান বেশ ব্যয়বহুল। সে দেশে কোনও ব্যক্তির আয়ের সঙ্গে মিলিয়ে যদি আমরা এই হিসাব কষি, তবে দেখা যাবে আয়ের নিরিখে সন্তান প্রতিপালনে সব চেয়ে ব্যয়বহুল দেশ চিন।
চিনে সন্তান প্রতিপালনের প্রধান খরচ শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যয়। জেফরিস জানিয়েছে, চিনে অধিকাংশ প্রাক প্রাথমিক স্কুলগুলি বেসরকারি হওয়ার ফলে সেখানে শিশুদের পড়ানোর বেশ খরচ।
সংস্থাটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চিনে ১৮ বছর পর্যন্ত একটি শিশুকে পড়াতে খরচ হয় ৭৫ হাজার ডলার (প্রায় ৫৭ লক্ষ টাকা)। পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে খরচ হয় ২২ হাজার ডলার (প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা)।
আমেরিকার বিষয়টি একটু অন্য রকম। চিনের তুলনায় শিক্ষার খরচ কম হলেও সেখানে একটি মূল পার্থক্য রয়েছে। শিক্ষার ভার লাঘব করার জন্য ছাত্রঋণ দেওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, শিক্ষা শেষ হওয়ার পর অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাবা-মাকেই সেই ঋণ শোধ করতে হয়।
আমেরিকার কলেজ বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ৫৫ শতাংশ স্নাতকরা ঋণের বোঝা নিয়ে স্নাতক হয়েছেন।
তবে বেজিং স্কুল-পরবর্তী শিক্ষাকে আরও সহজলভ্য করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করছে। জেফরিসের গবেষকরা জানিয়েছে, সরকারের পরবর্তী লক্ষ্য নার্সারি এবং কিন্ডারগার্টেনে পড়াশুনার খরচ কমানো।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন শি জিনপিং সরকার পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ঘোষণা করেছে, ২০২৫-এর মধ্যে তিন বছরের কম বয়সিদের জন্য নার্সারি স্কুলের সংখ্যা বৃদ্ধি করার। প্রতি ১০০০ জনে ৪টি স্কুল — এই হারে বৃদ্ধি করা হবে। যা আগের তুলনায় প্রায় আড়াই গুণ।
জেফরিস তার বিশ্লেষণে লিখেছে, ‘ধনী দেশগুলিতে জন্মের হার উন্নয়নশীল দেশগুলির তুলনায় কম। যাকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলে, ‘ডেমোগ্রাফিক-ইকোনমিক প্যারাডক্স’ অর্থাৎ আর্থিক ভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরা কম আয়ের লোকেদের তুলনায় কম সন্তান ধারণ পছন্দ করেন।
চিনও যত আর্থিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছে, সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে অন্যান্য উন্নত দেশের মতো ‘ডেমোগ্রাফিক-ইকোনমিক প্যারাডক্স’-এর ধারণা সে দেশের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে জন্মহার প্রত্যাশার চেয়েও নীচে নেমে যেতে পারে।
তবে চিনা দম্পতিরা বর্তমানে লালন পালনের উচ্চ ব্যয়ের কারণে একাধিক সন্তান নিতে নারাজ। যদিও পশ্চিমী দেশগুলিতে দম্পতিরা দুই থেকে তিনটি সন্তান চান বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
জন্মহার অর্থনীতির উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। কর্মক্ষম জনসংখ্যা কমে যাওয়ায় বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা এবং পেনশন-সহ কল্যাণ ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সমস্যা তৈরি হয়। কর্মী সংখ্যা কমে যাওয়ায় ফলে তা প্রতিস্থাপনের জন্য যান্ত্রিকতা (অটোমেশন)-র প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে তুলতে পারে।