কাফে কফি ডে-এর কর্ণধার ভি জি সিদ্ধার্থের রহস্যমৃত্যুতে তোলপাড় গোটা দেশ। সোমবার সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ থাকার পরে বুধবার ভোরে তাঁর নিথর দেহ নেত্রাবতীর পার থেকে উদ্ধার হয়। তিনি প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী ও কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণর জামাই। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। ব্যবসায় ব্যর্থতার জেরে ব্যবসায়ী বা সংস্থার কর্ণধারদের আত্মঘাতী হওয়ার নজির এর আগেও আছে।
বিনীত হুইগ ছিলেন এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার দক্ষিণ এশিয়ার চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও)। ২০১৬ সালে আত্মঘাতী হন মাত্র ৪৭ বছর বয়সে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তিনি গুরুগ্রামের সাইবার সিটির আবাসনের ১৯ তলা থেকে মরণঝাঁপ দিয়েছিলেন। পকেট থেকে উদ্ধার হয়েছিল সুইসাইড নোট। লেখা ছিল, অতিরিক্ত মানসিক চাপে হতাশ হয়ে তিনি নিজের জীবন শেষ করে দিচ্ছেন।
২০১৬ সালেই আত্মঘাতী হন লাকি গুপ্তা আগরওয়াল। নয়ডার এই তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ পরে ব্যবসায় এসেছিলেন। কিন্তু তাঁর তৈরি টেক্সট ও মেসেজিং অ্যাপ মুখ থুবড়ে পড়ে। পুলিশের ধারণা, সেই কারণেই মাত্র ৩৩ বছর বয়সে নাইট্রোজেন গ্যাস প্রশ্বাসে গ্রহণ করে তিনি আত্মঘাতী হন। ছবি: প্রতীকী
২০১২ সালে দেশে তৎকালীন প্রথম সারির পর্যটন সংস্থা ছিল রাজ ট্র্যাভেল ওয়ার্ল্ড। তাঁর প্রতিষ্ঠাতা ললিত শেঠ মরণঝাঁপ দিয়েছিলেন মুম্বইয়ের বান্দ্রা-ওরলি সি লিঙ্ক থেকে। পুলিশের দাবি, ঋণভার সামলাতে না পেরেই নিজের জীবন শেষ করে দিয়েছিলেন এই শিল্পপতি।
মধ্য লন্ডনের অভিজাত ও বিলাসী পেন্ট হাউজ থেকে ২০১৫ সালে রহস্যমৃত্যু হয়েছিল ভারতীয় বংশোদ্ভূত ধনকুবের ব্রিটিশ শিল্পপতি স্বরাজ পলের ছেলে অঙ্গদের। তিনি কাপারো ইন্ডাস্ট্রিজের সিইও ছিলেন। এই ঘটনাকে হতাশার জেরে আত্মহত্যা বলে অনেকে মনে করলেও শেষ অবধি পুলিশি তদন্তে দুর্ঘটনাই বলা হয়েছিল। নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছিল ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনা।
অলিম্পাস মেডিক্যাল সিস্টেমস ইন্ডিয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ছিলেন সুতোমি ওমোরি। ২০১২ সালে গুরুগ্রামে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ পেয়েছিল সুইসাইড নোট, যাতে লেখা ছিল, ‘যাবতীয় অসুবিধার জন্য আমি লজ্জিত ও দুঃখিত।’ মনে করা হয় সংস্থায় একটি আর্থিক তছরুপের ঘটনায় হতাশ হয়ে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন।
টাটা মোটর্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ছিলেন কার্ল স্লাইম। ২০১৪ সালে ব্যাঙ্ককে সংস্থার বোর্ড মিটিং-এ যোগ দিতে গিয়ে তিনি আত্মঘাতী হন। হতাশ হয়েই তিনি আত্মঘাতী হন বলে জানা যায়।
চলতি বছরের জুনে কেরলের কোট্টালিতে নিজের বাড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল সজন পারায়িলের দেহ। তিনি নাইজেরিয়ায় ব্যবসা করতেন। পরিবারের দাবি, কনভেনশন সেন্টারের পিছনে তাঁর বিনিয়োগ ছিল প্রায় পনেরো কোটি। কিন্তু স্থানীয় পুরসভা ইচ্ছাকৃত ভাবে গড়িমসি করে। ব্যবসায়ীর স্ত্রীর দাবি, ওই কনভেনশন সেন্টারের কমপ্লিশন সার্টিফিকেট, লাইসেন্স-সহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য নথিপত্র পুরসভা ইচ্ছে করে দিচ্ছিল না। এমনকি, ওই ভবনে অনুষ্ঠিত বিয়ের ক্ষেত্রেও শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছিল না বলে অভিযোগ।
সুইসাইড নোট না থাকলেও পুলিশ রহস্যমৃত্যুর তদন্ত শুরু করে। কাঠগড়ায় থাকা পুরসভা বিরোধীশূন্য। ২৮ জন সদস্য সবাই সিপিএম-এর। ব্যবসায়ীর মৃত্যুতে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে পুরসভা থেকে চারজন অধিকারিককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী এ সি মইদিন জানিয়েছেন, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হবে।
২০১৮-র নভেম্বরে আত্মঘাতী হন মুম্বইয়ের ব্যবসায়ী অশ্বিন জৈন। বেশ কয়েক দিন নিখোঁজ থাকার পরে মুম্বইয়ের লালবাগ এলাকায় নিজের গাড়ির ভিতর থেকে তাঁর গুলিবিদ্ধ দেহ পাওয়া যায়। পুলিশের ধারণা, তিনি বন্ধ গাড়িতে নিজের পিস্তলের গুলিতেই তিনি আত্মঘাতী হন।
কোনও সুইসাইড নোট না পাওয়া গেলেও পুলিশের ধারণা, ব্যবসায় আর্থিক ক্ষতির জেরই তাঁর আত্মহত্যার কারণ। বেশ কয়েক মাস ধরে তাঁর ব্যবসায় ক্ষতি চলছিল। মৃত্যুর আগে তাঁর শেষ ফোন ছিল বন্ধুকে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বন্ধুকে ফোনে তিনি বলেছিলেন ‘লাইফ ইজ ওভার।’ ছবি : প্রতীকী