রাজারা সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মাতেন, সোনার থালায় খেতেন— এ সব কথা অনেক শুনেছেন। কিন্তু সোনার প্রাসাদ! এ বিশ্বে এমন এক রাজা রয়েছেন তিনি বসবাসের জন্য আস্ত সোনার প্রাসাদই বানিয়ে ফেলেছেন।
তিনি হলেন ব্রুনেইয়ের সুলতান হাসানল বলকিয়াহ। ১৯৮৪ সালে ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্ত হয় ব্রুনেই। সে বছরই সুলতান হাসানল বলকিয়াহ এই প্রাসাদ গড়ে তুলেছিলেন বসবাসের জন্য।
ওই প্রাসাদের নাম ইস্তানা নুরুল ইমান. তবে বলকিয়াহ রাজ পরিবারে আরও একটি প্রাসাদ রয়েছে। তার নাম হাউস অব বালকিয়াহ। ১৪ শতকে এই প্রাসাদ গড়ে উঠেছিল। কিন্তু তখন রাজপ্রাসাদের নাম হাউস অব বলকিয়াহ ছিল না। ঠিক কবে থেকে এমন নামকরণ হয়েছে তা স্পষ্ট নয় ইতিহাসবিদদের কাছে।
অনেকেরই মত, ব্রুনেইয়ের বর্তমান সুলতান হাসানাল বলকিয়াহের নামানুসারে এই প্রাসাদের নামকরণ হয়েছে।
হাসানাল বলকিয়াহ হলেন ব্রুনেইয়ের বর্তমান সুলতান। তিনি ২৯তম সুলতান এবং এ দেশের প্রধানমন্ত্রীও। তবে ইস্তানা নুরুল ইমান প্রাসাদ বানানোর পর হাউস অব বলকিয়াহের জৌলুস কমে গিয়েছে।
সুলতান হাসানাল বিশ্বের সেরা ধনীদের মধ্যে অন্যতম। ২০০৮ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন অনুসারে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ দুই হাজার কোটি ডলার।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের পর তিনিই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে রাজত্ব করা সুলতান। ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর শাসনকালের ৫০ বছর পূর্তি উৎসব পালন করেন তিনি।
সুলতানের সম্পত্তির মূল উৎস ব্রুনেইয়ের বিপুল তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস। সুলতানের সোনার প্রাসাদ রয়েছে ব্রুনেই নদীর তীরে।
ব্যক্তিগত বসবাসের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাসাদ এটিই। এর নামের অর্থ বিশ্বাসের আলোর প্রাসাদ।
এর নকশা বানিযেছিলেন লিয়ান্ড্রো ভি লকসিন। ইসলাম এবং মালয় দুই রকম ঐতিহ্যের ছাপই রয়েছে এই সোনার প্রাসাদে।
সাধারণ মানুষের কাছে এই প্রাসাদ ঘুরে দেখার অনুমতি নেই। একমাত্র রমজান মাসের শেষে এক উৎসব উপলক্ষে সাধারণ মানুষ প্রাসাদে ঢুকতে পারেন এবং রমজান মাসে প্রাসাদ মুসলিমদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
৩ দিন ধরে উৎসব চলে। সে সময় প্রতি বছর ১ লাখেরও বেশি দর্শক হয়। নানা রকম সুস্বাদু পদের পাশাপাশি সবুজ কাগজে মোড়া উপহারও দেওয়া হয় দর্শকদের। মূলত পরিবারের ছোটদের জন্য টাকা দেওয়া হয় উপহার হিসাবে।
এই প্রাসাদটি ২০ লক্ষ বর্গফুট এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। তবে প্রাসাদটি আগাগোড়া সোনায় মোড়া নয়। প্রাসাদের চূড়া ২২ ক্যারাট সোনা দিয়ে তৈরি।
অত্যন্ত বিলাসবহুল এই প্রাসাদে সুলতান থাকেন, পাশাপাশি ব্রুনেইয়ের সমস্ত প্রশাসনিক কাজও হয় এখান থেকেই। তার জন্য আলাদা আলাদা ঘর বরাদ্দ রয়েছে।
প্রাসাদে অন্তত ১৭০০টি ঘর রয়েছে। ২৫৭টি শৌচালয় এবং ৫টি সুইমিং পুল রয়েছে।
সুলতান ৭ হাজার গাড়ির মালিক। এই ৭ হাজার গাড়িই রাখা থাকে এই প্রাসাদের গ্যারাজে। যার জন্য ১১০টি আলাদা গ্যারাজ রয়েছে।
এই গাড়ির মধ্যে রয়েছে ৩৬৫টি ফেরারি, ২৭৫টি ল্যাম্বারগিনি, ২৫৮টি অ্যাস্টন মার্টিন, ১৭২টি বুগাটি, ৬০০ রোলস রয়েস, ৪৪০টি মার্সিডিজ বেন্জ, ২৬৫টি অডি, ২৩৭টি বিএমডব্লিউ, ২২৫টি জাগুয়ার, ১৮৩টি ল্যান্ড রোভার।
পোলো খেলা সুলতানের নেশা। তাই ২২০টি পোলো ঘোড়ার জন্য একাধিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আস্তাবলও রয়েছে প্রাসাদে।
এমনকি সোনার পাত লাগানো ব্যক্তিগত বিমানও রয়েছে সুলতানের। সেই বিমানেরও ঠাঁই এই প্রাসাদেই।