আস্থাভোটে জয়ী বরিস জনসন। ছবি রয়টার্স।
শেষরক্ষা হল। তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় এমপিদের আনা আস্থাভোটে জিতে গেলেন কনজ়ারভেটিভ পার্টির নেতা তথা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তাঁর পক্ষে ২১১টি ভোট পড়েছে, আর বিপক্ষে ১৪৮টি।
পার্টিগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে কিছু দিন ধরেই প্রবল অস্বস্তিতে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী। অস্বস্তি বাড়িয়ে তাঁরই নিজের দল কনজ়ারভেটিভ পার্টির অন্তত ৫৪ জন এমপি সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে আস্থাভোটের ডাক দিয়েছিলেন। সেই মতো আজ স্থানীয় সময় সন্ধে ৬টা থেকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে শুরু হয় ভোট। চলে রাত ৮টা পর্যন্ত। ভোট গণনার ফল প্রকাশ হয় স্থানীয় সময় রাত ৯টায় (ভারতীয় সময় রাত দেড়টা)। দেখা যায়, জিতেছেন বরিস। ফলে দলীয় নেতৃত্ব এবং প্রধানমন্ত্রীর পদে অন্তত এক বছর থাকছেন তিনি (এক বার আস্থাভোট হওয়ার পরে এক বছরের আগে আর আস্থাভোট করা যায় না)।
কনজ়ারভেটিভ পার্টির নেতাদের একাংশ মনে করছিলেন, দেশের মানুষের কাছে তো বটেই, টোরিদের নেতা হিসেবেও বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন বরিস। তাই আস্থাভোটের মুখে দাঁড়াতে হয়েছিল তাঁকে। টোরি এমপি-দের সেই সিদ্ধান্ত গত কালই প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছিলেন কনজ়ারভেটিভদের পার্লামেন্ট কমিটির নেতা গ্রাহাম ব্র্যাডি। আজ ভোটের আগে দলীয় এমপি-দের সঙ্গে কথা বলেন বরিস। দাবি করেন, এখনও তাঁর উপরেই আস্থা রাখেন ব্রিটেনের অধিকাংশ মানুষ।
প্রধানমন্ত্রীকে সরাতে গেলে অন্তত ১৮০ জন কনজ়ারভেটিভ এমপি-কে তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিতে হত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, দলের ২১১ জন এমপি তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। অর্থাৎ, বিতর্ক থাকলেও দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপি-র যে এখনও বরিসের উপরেই আস্থা রয়েছে, তা ফের একবার স্পষ্ট হয়ে গেল।
আস্থাভোটে জিততে বরিসকে যে বিষয়গুলি সাহায্য করেছে তা হল— প্রথমত, নির্বাচনী মুখ হিসেবে বরিসের গ্রহণযোগ্যতা এখনও অটুট রয়েছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। দ্বিতীয়ত, বরিসের অনুপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে কে বসবেন, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এক সময়ে ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনককে বরিসের যোগ্য উত্তরসূরি ভাবা হলেও তাঁর জনপ্রিয়তা ক্রমশ তলানিতে এসে ঠেকেছে। এই পরিস্থিতিতে বিদেশমন্ত্রী লিজ় ট্রাস অথবা প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেরেমি হান্ট ছাড়া আর কোনও নামও সে ভাবে সামনে আসছে না। তৃতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল, দলে বরিসের আস্থাভাজন এমন অনেক এমপি রয়েছেন, যাঁরা এ বার প্রথম ভোটে জিতেছেন কার্যত বরিসের কাঁধে ভর করেই। তাঁরা কোনও ভাবেই বরিসের আনুগত্য থেকে সরে আসবেন না বলেই মনে করা হচ্ছিল। ভোটের ফলাফলেও সেই আনুগত্যের প্রতিফলন দেখা গেল।
গত মাসেই পার্টিগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে ব্রিটিশ আমলা সুজ়ান গ্রে-র রিপোর্ট (সু গ্রে রিপোর্ট) প্রকাশ্যে আসে। তার পর থেকেই তোলপাড় ব্রিটিশ রাজনীতি। ২০২০ সালে ব্রিটেন জুড়ে যখন কড়া কোভিড বিধি জারি ছিল, সেই সময়ে খাস প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে নিয়ম ভেঙে অজস্র পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। প্রথমে বিষয়টি অভিযোগের পর্যায়ে থাকলেও সু গ্রে রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরে দেখা যায়, সব অভিযোগই সত্যি। ২০২০ সালের জুন মাসে নিয়ম ভেঙে নিজের জন্মদিনের পার্টিতে উপস্থিত থাকার জন্য ৫০ পাউন্ড জরিমানা দিতে হয়েছে বরিসকে। একা বরিস নন, প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী এবং ঋষি সুনক-সহ সরকারের শীর্ষ স্থানীয় বেশ কয়েক জন ব্যক্তিরও জরিমানা হয়েছে একই কারণে। প্রথমে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে আয়োজিত সেই সব পার্টির কথা অস্বীকার করলেও রিপোর্ট পেশের পরে সমস্ত কিছুর দায় নিজে নেন বরিস। তবে পদত্যাগ করতে অস্বীকার করেন তিনি। বলেন, তিনি সামনে তাকাতে চান।
গত শুক্রবার রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শাসনকালের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চলা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এসে সাধারণ মানুষের বিদ্রুপের শিকার হন প্রধানমন্ত্রী। তার পরেই আস্থা ভোটের সিদ্ধান্ত নেন টোরি এমপি-দের একাংশ।সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।