ফাইল চিত্র।
দেশ জুড়ে লকডাউন চলাকালীন কোভিড বিধি ভেঙে মদের পার্টিতে অংশ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে খোদ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বিরুদ্ধে। গত সপ্তাহে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন পার্টির কথা তিনি জানতেন না। কাজের ফাঁকে মিনিট পঁচিশের জন্য সে দিন ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের বাগানে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে উপস্থিত কয়েক জন সরকারি আধিকারিককে অতিমারির মধ্যেও কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানানোই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল। সেখানে যে জনা তিরিশেক লোকের জমায়েত হয়েছে, তা তিনি বুঝতে পারেননি। তবে প্রধানমন্ত্রী গোটা দেশের সামনে পুরোটাই মিথ্যে বলছেন বলে এ বার দাবি করলেন বরিসেরই প্রাক্তন বিশেষ উপদেষ্টা ডমিনিক কামিংস। যার ফলে বরিস আরও প্যাঁচে পড়বেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।
বিষয়টি নিয়ে বরিসের ইস্তফা দাবি করে আগেই সরব হয়েছেন বিরোধীরা। এ বার খোদ প্রধানমন্ত্রীরই প্রাক্তন উপদেষ্টা তাঁকে মিথ্যেবাদী বলায় ব্রিটিশ রাজনীতিতে নতুন করে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। গত কাল নিজের একটি ব্লগে কামিংস দাবি করেছেন, ওই পার্টির আয়োজন করা হলে কোভিড বিধি ভঙ্গ হবে বলে আগেই বরিসকে সতর্ক করেছিলেন তিনি। কিন্তু কামিংসের অভিযোগ, তাঁর কথায় আমলই দেননি প্রধানমন্ত্রী। এমনকি ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের তরফে পার্লামেন্টে যে দাবি করা হয়েছে, এই পার্টি সংক্রান্ত কোনও মেল বরিস দেখেননি, তা-ও সত্যি নয় বলে দাবি করেছেন কামিংস।
কামিংসের সঙ্গে বরিসের বর্তমান সম্পর্ক একেবারেই ভাল নয়। কিন্তু ২০২০ সালের মে মাসে, যে সময়ে কোভিড বিধি লঙ্ঘন করে খাস প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের বাগানে ওই পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল, তখন কামিংস ছিলেন বরিসের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী। ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের আরও দুই প্রাক্তন কর্মীও সম্প্রতি একটি প্রথম সারির ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করছেন যে, ওই সময়ে কামিংস তাঁদের জানিয়েছিলেন যে তিনি পার্টি না করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করেছেন।
সে দিনের পার্টির আয়োজন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রধান ব্যক্তিগত সচিব মার্টিন রেনল্ডস। পার্টিতে ১০০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও সে দিন এসেছিলেন ৩০ জন। কামিংসের দাবি, আমন্ত্রিতদের সকলেই ছিলেন সরকারি আধিকারিক। তবে শুধু বরিসকেই নয়, রেনল্ডসকেও পার্টির আয়োজন করতে বারণ করেছিলেন কামিংস। যার জবাবে রেনল্ডস কামিংসকে জানান, পারস্পরিক দূরত্ব বিধি বজায় রাখলে কোভিড বিধি লঙ্ঘন হবে না বলেই মনে করছেন তিনি। বরিসও এতে আপত্তি করবেন না বলেও তখন জানিয়েছিলেন রেনল্ডস।
তবে শুধু ওই এক দিনের পার্টি নয়। লকডাউন ও বিধির কড়াকড়ি চলাকালীন ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে এই ধরনের মোট ১৫টি অবৈধ জমায়েতের তদন্ত শুরু হয়েছে ব্রিটেনে। সরকারি আধিকারিকেরা মনে করছেন আগামী সপ্তাহেই এ নিয়ে রিপোর্ট জমা দেবে তদন্ত কমিটি। সেই পার্টিগুলিতে কত জন করে অতিথি উপস্থিত ছিলেন এবং তাতে কত মাত্রায় কোভিড বিধি লঙ্ঘন হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখবে সেই কমিটি।
তবে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যে বলার শাস্তি কী হতে পারে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে ব্রিটেনে। এর মধ্যেই এক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ উপপ্রধানমন্ত্রী ডমিনিক রাব দাবি করেছেন, পার্লামেন্টে কোনও রাজনীতিক মিথ্যে বলে গোটা দেশ ও এমপিদের বিভ্রান্ত করলে তাঁর ইস্তফা দেওয়াই উচিত। টেমসের জল এখন কোন দিকে গড়ায়, সে দিকেই নজর গোটা বিশ্বের।