বরিস জনসন।
তাদের দেশে আশ্রয়ের খোঁজে আসা শরণার্থীদের জাহাজে চাপিয়ে সাড়ে ছ’হাজার কিলোমিটার দূরে পূর্ব আফ্রিকার দেশ রোয়ান্ডায় পাঠাতে চায় বরিস জনসন প্রশাসন। সম্প্রতি ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি পটেল রোয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে গিয়ে এই মর্মে একটি চুক্তি সইও করে এসেছেন। ব্রিটেনের এই সিদ্ধান্তে সমালোচনায় মুখর হয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি।
গত কাল প্রধানমন্ত্রী জনসন জানান, দেশের উপরে যে ভাবে শরণার্থীদের চাপ বাড়ছে, তা মোকাবিলা করা তাঁদের পক্ষে খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের সাধ আছে, কিন্তু আর সাধ্য নেই।’’ তাই আফ্রিকার ছোট্ট দেশ রোয়ান্ডার সহায়তায় ১২ কোটি পাউন্ডের একটি পাইলট প্রকল্প চালু করতে চান তিনি। এই প্রকল্পের আওতায় পড়বেন সেই সব কমবয়সি পুরুষ শরণার্থী, যাঁরা একা ব্রিটেনে ঢুকেছেন। বয়স্ক পুরুষ, শিশু ও মহিলাদের এই প্রকল্পে রাখা হবে না। যে সব পুরুষ সপরিবার আশ্রয়ের খোঁজে ব্রিটেনে পৌঁছেছেন, তাঁদেরও রোয়ান্ডায় পাঠানো হবে না বলে জানান বরিস। সরকারি পরিসংখ্যানগত বলছে, বছর ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে অন্তত ২৮,৫২৬ জন শরণার্থী ব্রিটেনে প্রবেশ করেছিলেন। অভিবাসী দফতরের আশঙ্কা, আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যাটি দিনে এক হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। বরিসের কথায়, ‘‘আমাদের সমবেদনা জানানোর ইচ্ছা অপরিসীম, কিন্তু আমাদের ক্ষমতা সীমিত। যাঁরা বেআইনি ভাবে এ দেশে ঢুকছেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করার জন্য আমরা করদাতাদের উপরে আর কত বোঝা চাপাব!’’ তিনি জানান, ব্রিটেনের কাছ থেকে সাহায্য পেলে রোয়ান্ডা সহজেই হাজার হাজার মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার পরিকাঠামো তৈরি করতে পারবে। অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক এবং ইজ়রায়েলও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি করে সেখানে শরণার্থীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে।
শরণার্থী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলি জনসনের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে। তাদের দাবি, রোয়ান্ডায় হরহামেশাই মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা ঘটনা ঘটে। তা ছাড়া, ‘করদাতাদের সুবিধার জন্য’ যে পদক্ষেপ বরিস নিতে চলেছেন, তা আর্থিক ভাবে আদৌ লাভজনক হবে কি না, সে প্রশ্নও তুলেছে সংগঠনগুলি। আর লেবার নেতা কায়ার স্টারমারের কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী জনসনের এই পরিকল্পনা অত্যন্ত অবাস্তব। ‘পার্টিগেট’ কেলেঙ্কারি থেকে নজর ঘোরাতেই তিনি এ সব করছেন।’’