সেই বিতর্কিত পার্টি।
‘পার্টিগেট কেলেঙ্কারি’ পিছু ছাড়ছে না প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের। লকডাউন চলাকালীন কোভিড বিধি ভেঙে নিজের সরকারি বাসভবনে একাধিক পার্টিতে যোগদানের অভিযোগ তো ছিলই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। তার জন্য তাঁর জরিমানা ধার্য করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে খাস হাউস অব কমন্সে দাঁড়িয়ে তিনি বিধি ভঙ্গ করে পার্টিতে যাননি বলে এমপি-দের পুরোপুরি ভুল বুঝিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এ বার বরিসের বিরুদ্ধে সেই সংক্রান্ত তদন্তও শুরু হতে চলেছে। এটা হবে তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া তৃতীয় তদন্ত।
প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদৌ তদন্ত হবে কি না, তা নিয়ে গত কাল ভোটাভুটি ছিল ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে। সেখানে বিষয়টি নিয়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বিতর্ক চলার পরে ভোটাভুটির সময়ে অধিকাংশ এমপি-ই প্রস্তাবের বিরোধিতা করার পথে হাঁটেননি। অর্থাৎ তাঁরা চাইছেন, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্তটা হোক। সেই মতোই বরিসের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করবে হাউসের প্রিভিলেজ কমিটি। কিন্তু এখনই নয়, পুলিশের সমস্ত তদন্ত শেষ হলে প্রিভিলেজ কমিটি নিজেদের তদন্ত শুরু করবে বলে জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জনসন এই মুহূর্তে দু’দিনের সফরে ভারতে রয়েছেন। আজ প্রায় সব ক’টি প্রথম সারির ব্রিটিশ দৈনিকই প্রথম পাতায় গুজরাতে বরিসের পাগড়ি পরে হাত জোড় করা ছবি ছেপেছে। সেই সঙ্গেই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বলতে শুরু করেছে যে অবশেষে টোরি নেতারাই নিজেদের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন।
বস্তুত হাউস অব কমন্সের এই ভোটাভুটি পিছিয়ে দিতে চেয়েছিল ব্রিটিশ সরকার। কিন্তু বরিসের নিজের দল কনজ়ারভেটিভ পার্টিরই কিছু এমপি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মুখ খোলেন। তার পরেই তড়িঘড়ি ভোটের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বিরোধী লেবার পার্টির নেতাদের মতো টোরি নেতাদের একাংশও মনে করছেন বরিস সত্যিই পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের পার্টি নিয়ে সব এমপিকে ক্রমাগত বিপথে চালিত করেছেন। ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী, দোষ প্রমাণিত হলে পদত্যাগ করতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে।
কনজ়ারভেটিভ পার্টির এই সব বিদ্রোহী নেতাদের প্রশংসাই করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের একটা বড় অংশ। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা এখন মনে করছেন, বরিসের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে চলেছেন তাঁরই দলের বেশ কিছু এমপি। বরাবরের জনসন সমালোচক হিসেবে পরিচিত কনজ়ারভেটিভ এমপি টোবিয়াস এলউড যেমন বলেই দিয়েছেন, ‘‘এখন যদি নয়, কখন বরিসের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হবে, সেটাই প্রশ্ন।’’ বিরোধীরাও বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর নিজের দলের নেতাদেরই আর তাঁর উপরে যে ভরসা নেই, সেটা দিন দিন আরও স্পষ্ট হচ্ছে।
তবে দেশ থেকে আপাতত কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে থাকা বরিস এ সব তদন্ত নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, তাঁর লুকোনোর কিছুই নেই। তিনি যা বলার পার্লামেন্টকে আগেই জানিয়েছেন। আপাতত ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিস্থিতি আর দেশে মূল্যবৃদ্ধি পরিস্থিতিই ভাবাচ্ছে তাঁকে। সমালোচকেরা অবশ্য বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধকে ঢাল করে আগেও ইস্তফা এড়াতে চেয়েছেন বরিস। যদিও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘‘মনে হচ্ছে বিরোধীরা শুধু এই একটি মাত্র বিষয়কেই অগ্রাধিকার দিতে চাইছেন। তাতে আমার বিশেষ অসুবিধা নেই।’’