পাঁচ নাইজিরীয়কে খুনের এই ভিডিয়োই প্রকাশ করেছে জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম। ছবি: সংগৃহীত।
দেশের প্রত্যন্ত করোনা-বিধ্বস্ত অঞ্চলে ত্রাণ বিলি করতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই উধাও হয়ে যান পাঁচ নাইজিরীয়। এক বছর পার হয়ে গেলেও খোঁজ মিলছিল না তাঁদের। বুধবার ওই পাঁচ নাইজিরীয়কে দেখা গেল শেষ বারের মতো। জঙ্গি সংগঠন বোকো হারামের প্রকাশিত একটি ভিডিয়োতে। ক্যামেরার সামনেই তাঁদের গুলি করে হত্যা করছে জঙ্গিরা। ভিডিয়োটি প্রকাশ্যে আসতেই ফের সমালোচনার মুখে নাইজিরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহম্মদ বুহারি। বোকো হারামের মতো কট্টরপন্থীদের দেশ থেকে নির্মূল করতে বুহারির ব্যর্থতায় ক্ষোভে ফুঁসছে নাইজিরিয়া।
ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, লাল কাপড়ে ওই পাঁচ জনের চোখমুখ ঢাকা। হাঁটু গেড়ে বসে রয়েছেন তাঁরা। পিছনে দাঁড়িয়ে সশস্ত্র জঙ্গিরা। স্কার্ফ দিয়ে তাদেরও মুখ ঢাকা। কিছু ক্ষণ পর দেখা গিয়েছে, পাঁচ জনের দেহ ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছে জঙ্গিদের গুলিতে। খুনের পাশাপাশি ওই ভিডিয়োতে একটি বার্তাও দিয়েছে বোকো হারামের জঙ্গিরা। হাউসা ভাষায় এক অজ্ঞাতপরিচয়ের কণ্ঠস্বর শোনা গিয়েছে তাতে— ‘‘কাফেরদের জন্য এই বার্তা, যাঁরা তোমাদের ব্যবহার করে প্রতারণা করে সবাইকে কাফেরে পরিণত করছে।’’
স্থানীয় প্রশাসনের অভিযোগ, মোটা পণের দাবিতে ওই পাঁচ নাইজিরীয়কে অপহরণ করেছিল ইসলামিক স্টেটের শাখা সংগঠন বোকো হারাম। সেই দাবি না মেটায় পণবন্দিদের খুন করে তারা। ২০০৯ সালে স্বাধীন প্রদেশের দাবিতে আত্মপ্রকাশ করে ইসলামিক কট্টরপন্থী সংগঠন বোকো হারাম। তবে কিছু দিনের মধ্যে তা জঙ্গি রূপ নেয়। তার পর থেকে অপহরণ বা খুনের মতো ঘটনায় আকছার নাম জড়িয়েছে তাদের। তবে সরকারি আশ্বাস সত্ত্বেও তাদের বাড়বাড়ন্ত কমেনি।
আরও পড়ুন: ‘আমেরিকার আস্থা অর্জন করতে পেরেছে ভারত’, জানালেন মার্কিন বিদেশসচিব
গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দা করে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বুহারি। সেই সঙ্গে প্রেসিডেন্টের তরফে একটি বিবৃতিতে তাঁর মুখপাত্র গারবা শেহু বলছেন, ‘‘উত্তর-পূর্ব নাইজিরিয়া থেকে বোকো হারামকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করতে সব রকমের পদক্ষেপ করার কাজ করে যাবে সরকার, এই আশ্বাস দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট। এই নৃশংসতা যারা করেছে, তারা আইনের হাত থেকে বাঁচতে পারবে না।’’
আরও পড়ুন: ১৪ নয়, ১০! আমেরিকার নতুন দাওয়াই
তবে সরকারি আশ্বাস সত্ত্বেও নাইজিরীয়দের ক্ষোভ প্রশমিত হচ্ছে না। সরকারি পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ২০০৯-এ নাইজিরিয়ায় এই কট্টরপন্থী জঙ্গি সংগঠনের জন্মলগ্ন থেকে গত বুধবার পর্যন্ত বোকো হারামের হাতে বলি হয়েছেন ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ। গত মাসেই এক দিনে ৮১ জনকে খুন করে তারা। নাইজিরিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে করোনা-পরিস্থিতির জেরে ত্রাণের প্রয়োজন, সেখানে পৌঁছলেও স্বাস্থ্যকর্মী, বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরাই জঙ্গিদের সহজ টার্গেট হচ্ছেন।
আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ নাইজিরিয়ায় ইতিমধ্যেই ৩৭ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, নাইজিরিয়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮ হাজার ৩৪৪। ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে ৮১৩ জনের। তবে জঙ্গিদের দ্বারা স্বাস্থ্যকর্মীদের অপহরণ ও খুনের ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণের কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় শহর লাগোসে সুরক্ষা সরঞ্জামের অভাব রয়েছে দাবি করে চিকিৎসকেরা ধর্মঘটও করেছেন। নাইজিরিয়ার উত্তর-পূর্ব প্রান্তের এমনই এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়েছিলেন ওই পাঁচ জন। বিদেশি সংস্থার পাশাপাশি সরকারি ত্রাণ বিলির কাজে খাবার, পানীয় জল এবং ওষুধপত্র-সহ সুরক্ষা সরঞ্জাম বিলি করার জন্য গিয়েছিলেন তাঁরা। জঙ্গিদের ভয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণের কাজেও প্রভাব পড়ছে বলে জানিয়েছেন বোর্নো প্রদেশের এক চিকিৎসক অ্যালেন মানাসেহ। অ্যালেনের কথায়, ‘‘ত্রাণের কাজে (স্বাস্থ্যকর্মীরা) এমন কোনও জায়গায় যেতে চাইবেন না, যেখানে তাঁদের জঙ্গিদের টার্গেট হতে হয়।’’ অতিমারির আবহে এই ভীতি আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করছে বলে মনে করেন তিনি। অ্যালেন বলেন, ‘‘এতে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে কী প্রভাব পড়বে, তা কল্পনাও করা যায় না।’’ সরকারি আশ্বাস সত্ত্বেও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে মানবাধিকার কর্মীদের নিরাপত্তা অপ্রতুল, তা স্বীকার করে নিয়েছেন এক আমলা সানি মাম্মান। তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানবাধিকার কর্মীদের সুরক্ষার কোনও নিশ্চয়তা নেই।’’