(বাঁ দিকে)মুহাম্মদ ইউনূস। খালেদা জিয়া (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর বিজয় দিবসের বক্তৃতায় বাংলাদেশে নির্বাচনের সম্ভাব্য যে সম্ভাব্য সময়সীমা জানিয়েছেন, তাতে সন্তুষ্ট নয় খালেদা জিয়ার দল বিএনপি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বুধবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ওই ঘোষণা নিয়ে অসন্তোষ জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির। আবার নির্বাচনী সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার এ দিনই জানিয়েছেন, আগামী ভোটে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে তাঁরা কোনও বাধা তৈরি করবেন না, যা শুনে হইচই শুরু করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, যে কোনও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ‘গণহত্যাকারী’ আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ তারা মানবে না।
নির্বাচন কবে হবে, কী ভাবে হবে তা নিয়ে সাড়ে চার মাসে কোনও পথরেখা বা সময়সীমা ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে বলা হচ্ছিল না। পরিবর্তে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কাঠামোগত সংস্কারের কথাই বলে চলেছিলেন ইউনূস ও তাঁর উপদেষ্টারা। বিশেষ করে বিএনপি নির্বাচন ঘোষণা করার জন্য বারে বারে তাড়া দিচ্ছিল। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক প্রতিদিনই বলছিলেন, সংস্কার করার এক্তিয়ার নির্বাচিত সরকারের। ইউনূস যে সব সংস্কারের কথা বলছেন, সেগুলি ৩১ দফা কর্মসূচিতে আগেই তাঁরা ঘোষণা করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সংস্কারটুকু করে ভোটের ব্যবস্থা করা। তার পরে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া। তবেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরে আসতে পারে। তারেক এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বার বার বলছেন, নানা অজুহাত তুলে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে।
এর পরে সোমবার বিজয় দিবসের ভাষণে ইউনূস জানান, সব শর্ত পূরণ করলে ২০২৫-এর শেষ থেকে ২০২৬-এর প্রথমার্ধের মধ্যে ‘নির্বাচন করা যেতে পারে’। পরের দিন ইউনূসের প্রেস সচিব আবার ব্যাখ্যা দেন, ২০২৬-এর জুনের পরে নির্বাচন হতে পারে। বুধবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশের কথা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণে নির্বাচন সংক্রান্ত বক্তব্য অস্পষ্ট। তাঁর বক্তব্যে নির্বাচনের একটি সাম্ভাব্য সময়ের কথা বলা হলেও নির্বাচনের রোড ম্যাপ সম্পর্কে কোনও সুনির্দিষ্ট বক্তব্য নেই।’ ইউনূস ও তাঁর প্রেস সচিবের বক্তব্য পরস্পরবিরোধী বলে মন্তব্য করে বিএনপি বলেছে, ‘এই ধরনের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য আরও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়ে যাওয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিলম্বের প্রয়োজন নেই।’
আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশ নিতে দেওয়া নিয়ে সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম আগে তাঁর আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন। এ দিন রংপুরে তিনি উল্টো সুরে বলেন, সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন করার লক্ষে সরকারকে পরামর্শ দেবে কমিশন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে বাধা রাখা হবে না কমিশনের রিপোর্টে। এর পরেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিবৃতি দেয়, ‘আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে একাধিক গণহত্যার জন্য দায়ী। নির্বাচন-সহ যে কোনও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করলে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের শহিদদের রক্তের অবমূল্যায়ন হবে।’