ভারতীয় হাইকমিশনের বাইরে পাকিস্তানি বিক্ষোভ

কাশ্মীরে থাকা স্বজনদের সঙ্গে অনেকেই লন্ডন থেকে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন, পারেননি।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৪৪
Share:

প্রতিবাদ: লন্ডনের ইন্ডিয়া হাউসের সামনে বিক্ষোভকারীদের জমায়েত। নিজস্ব চিত্র

বিক্ষোভের আঁচ লাগল লন্ডনের ভারতীয় হাইকমিশনের বাইরে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে। নিশানায় ছিলেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা। অন্তত ৫ হাজার লোক প্রথমে পাকিস্তান, কাশ্মীরের পতাকা এবং খলিস্তানের পতাকা হাতে ইন্ডিয়া হাউসের বাইরে জমায়েত করেন। তার কিছু ক্ষণের মধ্যে প্রতিবাদীদের মধ্যে থেকে ছুটে আসে ডিম আর বোতল। বিক্ষোভকারীরা দলে দলে বার্মিংহ্যাম, ব্র্যাডফোর্ড, লেস্টার, গ্লাসগো এবং ম্যাঞ্চেস্টার থেকে বাসে করে এসেছিলেন। এঁদের মধ্যে অনেকে শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদে শামিল হতে চেয়েছিলেন বলে দাবি। কিন্তু বিক্ষোভের মাত্রা এতটাই বেশি ছিল, যে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ একরকম চাপা পড়ে যায় তাতে।

Advertisement

কাশ্মীরে থাকা স্বজনদের সঙ্গে অনেকেই লন্ডন থেকে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন, পারেননি। এমন অনেকেই সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে না পেরে তাঁরা উদ্বিগ্ন। তাই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের কথা ভেবেছিলেন। যদিও তাতে শেষ পর্যন্ত আর শান্তি বজায় রাখা যায়নি।

ভারতীয় হাইকমিশনের অফিসের বাইরের অংশে (যাকে বলা হয়, ইন্ডিয়া প্লেস) স্বাধীনতা দিবসে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানেই ভারতীয়দের দু’দিক থেকে ঘিরে ফেলেন বিক্ষোভকারীরা। এত বেশি সংখ্যক বিক্ষোভকারী ছিলেন যে পুলিশ সামাল দিতে পারেনি প্রাথমিক ভাবে। অনুষ্ঠানের মধ্যে কিছু ভারতীয় যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নামে স্লোগান দিচ্ছিলেন, তখনই পাকিস্তানের বেশ কয়েক জন তাঁদের দিকে বোতল ছোড়েন বলে অভিযোগ।

Advertisement

এই গোলমালের মধ্যে ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননা করারও অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের মধ্যে চার জনকে গ্রেফতার করেছে। তাঁদের মধ্যে এক জনের কাছ থেকে ছুরিও মিলেছে বলে দাবি। সব মিলিয়ে বিক্ষোভের মধ্যে ভারতীয় হাইকমিশনের অনুষ্ঠান বাতিল হয়ে যায়। ভারতীয়দের সেখান থেকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হয়। হাইকমিশনের তরফে পরে তাঁদের জল ও খাবার দেওয়া হয়। এই ভারতীয়ের মধ্যে অনেক শিশুও ছিল। সকলেরই এখন গ্রীষ্মের ছুটি, তাই বাবা-মায়ের সঙ্গে তারা এসেছিল অনুষ্ঠান দেখতে।

স্বরাষ্ট্র দফতরের পাশাপাশি লন্ডনের মেয়র সাদিক খানের কাছেও অভিযোগ গিয়েছে ভারতীয়দের কাছ থেকে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি পটেল জানতে চেয়েছেন, হাইকমিশনের অনুষ্ঠানে বিক্ষোভ হতে পারে, এই খবর গোয়েন্দাদের কাছে থাকা সত্ত্বেও কেন যথেষ্ট পুলিশ মোতায়েন করা হয়নি।

লন্ডনে বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিজয় চৌথিওয়ালে বলেছেন, ‘‘আজ যা ঘটেছে, তা নিন্দনীয়। মহিলা ও শিশুরা এসেছিলেন অনুষ্ঠান দেখতে। তাঁদের নিগ্রহ করা হয়েছে, ডিম আর বোতল ছোড়া হয়েছে। সাদিক খান এবং মেট্রোপলিটান পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিন।’’ ঘটনার জেরে বেশ কিছু ক্ষণ বন্ধ করে দিতে হয়েছিল ভারতীয় হাইকমিশনের দফতর।

কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরেই উত্তাপ টের পাওয়া যাচ্ছে লন্ডনের পথঘাটে। কাশ্মীরে মানবাধিকার ফেরানোর দাবিতে গত কাল বিকেল পাঁচটা থেকে ট্রাফালগার স্কোয়ারে মিছিল হয়েছে। সেখানেও শান্তিপূর্ণ পথে যাঁরা হাঁটছিলেন, তাঁদের উপরে চড়াও হওয়ার অভিযোগ ওঠে পাকিস্তানি এবং খলিস্তানিদের বিরুদ্ধে। বার্মিংহ্যামে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বয়কট করার ডাক দিয়েছেন ব্রিটিশ পাকিস্তানিরা। এক গুজরাতি ব্যবসায়ী বলছেন, ‘‘এর পরে কোপের মুখে পড়বেন পাক ব্যবসায়ীরা। যা হচ্ছে, তা কারও জন্যই ভাল নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement