ব্রিটেনের স্থানীয় কাউন্সিল নির্বাচনে এ বার লেবার পার্টির জয়জয়কার। এই বিপুল জয়ের শরিক খিদিরপুরের ময়ূরভঞ্জ রোডের এক প্রবাসীও। লন্ডনের নিউহ্যাম বরোর ইস্ট হ্যাম ওয়ার্ডের ভোটযুদ্ধে প্রথম বারেই বাজিমাত করেছেন ইমাম হক।
রাজনীতিতে হাতেখড়ি অবশ্য কলকাতায় থাকাকালীন। শ্যামাপ্রসাদ কলেজে পড়ার সময়ে ছাত্র পরিষদের সদস্য ছিলেন। তবে কলেজ শেষ হতেই ২০০৫ সালে এমবিএ করতে যান ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর পরে কর্মসূত্রে ব্রিটেনেই থেকে যান ইমাম। বর্তমানে সিনিয়র বিজ়নেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত তিনি। এক দশকেরও বেশি সময় কাটানোর পরে ২০১৭ সালে ব্রিটেনের নাগরিকত্ব পান এই বঙ্গসন্তান। তত দিনে অবশ্য ব্রিটিশভূমেও রাজনীতির সলতে পাকানো শুরু করেছেন।
আনন্দবাজারকে ফোনে ইমাম বলেন, ‘‘শুরু থেকেই চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজেও জড়িয়ে পড়েছিলাম। নাগরিকত্ব পেয়েই লেবার পার্টির সদস্যপদ গ্রহণ করি। আনুষ্ঠানিক ভাবে সেই শুরু। গত ১৫ বছর ইস্ট হ্যামেই রয়েছি। এলাকাটা খুব ভাল করে চিনি।’’ তবে এ বারে ইমামের ভোটের টিকিট পাওয়া কিছুটা অপ্রত্যাশিতই।
গত বারেও এই কেন্দ্রে লেবার পার্টির প্রার্থীই জয়ী হয়েছিলেন। তবে এ বারে প্রার্থী মনোনয়নের সাক্ষাৎকারে
ইমামের চিন্তাভাবনা, আত্মবিশ্বাস নজর কেড়েছিল লেবার পার্টি নেতৃত্বের। সেই সূত্রেই তাঁকে মনোনীত করা হয়। ইমামও হতাশ করেননি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজ়ারভেটিভ পার্টির প্রার্থীকে ১০২৫ ভোটে পরাস্ত করেন। ইমামের প্রাপ্ত ভোট ১৭২৫।
প্রচার পর্বের শুরু থেকেই নিবিড় জনসংযোগের উপরে জোর দিয়েছিলেন ইমাম। তাঁর কথায়, ‘‘প্রত্যেকের বাড়ি গিয়ে প্রচার করেছি। প্রচারের সময়ে কেউ বাড়ি না থাকলে ফের সেখানে গিয়েছি। তাঁদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, এই ওয়ার্ডকে আরও স্বচ্ছ, সুরক্ষিত গড়ে তুলব। সবুজায়নেও জোর দেওয়া হবে।’’
প্রচার পর্বে অবশ্য কনজ়ারভেটিভ পার্টি নয়, গ্রিন পার্টি নিয়েই কিছুটা উদ্বেগ ছিল নবনির্বাচিত এই কাউন্সিলারের। ইমামের কথায়, ‘‘ভোটের সময়ে মনে হয়েছিল, গ্রিন পার্টি কিছুটা বেগ দিতে পারে। কারণ এখন জলবায়ু পরিবর্তন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই জন্যই গ্রিন পার্টির ভোট শেয়ারও ক্রমশ বাড়ছে।’’ সোশ্যাল মিডিয়ায় ইমামের বিরুদ্ধে জোরদার প্রচারও চালিয়েছিলেন বিরোধীরা। তবে শেষ হাসি হেসেছেন এই বঙ্গসন্তানই। গোটা নির্বাচন পর্বে পাশে থেকছেন স্ত্রী আফরিন।
লন্ডনে কাজ ও রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও কলকাতা এখনও তাঁর মনের মণিকোঠায়। বাবা-মা থাকেন খিদিরপুরের ময়ূরভঞ্জ রোডের বাড়িতেই। রয়েছে প্রচুর বন্ধুও। তাঁদের টানে বছরে অন্তত এক বার তিলোত্তমায় আসেন ইমাম। তবে করোনা অতিমারির পরে অনেক দিন আসতে পারেননি। সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতেই গত ডিসেম্বরে কলকাতা আসেন তিনি। ইমাম বলেন, ‘‘বাবা-মা, পরিজন তো কলকাতাতেই থাকেন। তা ছাড়া নিজের শিকড় কি ভুলে যাওয়া সম্ভব! আমার জয়ের পরে তো বাবা গোটা পাড়ায় মিষ্টি খাইয়েছেন। বন্ধুরাও উদ্যাপন করেছে।’’ এখনও কলকাতাকেই প্রাণের শহর বলে মনে করেন ইমাম। একান্ত আড্ডায় আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘কলকাতার একটা ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতি রয়েছে। আমি ইদের পাশাপাশি দুর্গাপুজোও উদ্যাপন করি। গর্বিত এই সংস্কৃতির জন্য। ব্রিটেনেও বলি কলকাতার এই অনন্য দিকটির কথা। তবে শেষ ক’বছরে যেন পরিস্থিতি অনেকটা বদলে গিয়েছে। বেড়েছে ধর্মীয় বিভেদ। এমনটা কিন্তু ছিল না।’’
কলকাতা ও লন্ডনের মধ্যে কোনও মিল পান? ইমাম বলেন, ‘‘কলকাতার মতো লন্ডনও ‘ইনক্লুশনে’ বিশ্বাসী। এই শহর সকলকে স্বপ্নপূরণের সুযোগ দেয়। পৃথিবীর সমস্ত প্রান্তের মানুষই এই শহরে থাকেন।’’