দুর্গাপুর সেতুর নীচের বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পুড়ে ছাই একের পর এক ঝুপড়ি। ছবি: পিটিআই।
কলকাতা এবং শহরতলিতে ঘিঞ্জি ও বস্তি অঞ্চলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রায়শই ঘটছে। গত শনিবার নিউ আলিপুরের দুর্গাপুর সেতুর নীচে থাকা বস্তিতে অগ্নিকাণ্ড তার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ। আগুন নেভাতে যাওয়া দমকল বাহিনীকে পড়তে হয় নানা সমস্যায়। যানজট, অপরিসর রাস্তা কিংবা রাস্তার উপর অবৈধ দখলদারি এবং পার্কিং— এ রকম বেশ কিছু বাধার জেরে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পেরিয়ে যায় অনেকটা সময়। তার জেরে অনেক সময়ই পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে পড়ে। সমস্যা সমাধানে রাজ্য দমকল বিভাগ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোমবার নিউ টাউনের দমকল দফতরের অফিসে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন মন্ত্রী সুজিত বসু। বৈঠকে ছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা, বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার মুকেশ, হাওড়ার পুলিশ কমিশনার প্রবীণ ত্রিপাঠী এবং ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া।
সেই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়েছে, শহরের বিভিন্ন ঘিঞ্জি এবং বস্তি অঞ্চলে কোথায় কী সমস্যা রয়েছে, কী ভাবে তার সমাধান সম্ভব, তা ‘ম্যাপিং’ করা হবে। তৈরি করা হবে বিশেষ নির্দেশিকা। মূল লক্ষ্য থাকবে ঘিঞ্জি ও বস্তি এলাকার সমস্যাগুলি চিহ্নিত করা, সমাধানের পথ বার করা এবং বাসিন্দাদের সচেতন করে তোলা। এই সমস্যাগুলি সমাধানে একটি বিশেষ ‘ম্যাপিং’ প্রক্রিয়া চালু করা হবে। এর মাধ্যমে বস্তি এলাকার সঙ্কীর্ণ রাস্তা, জলের উৎস এবং অন্যান্য সমস্যাগুলি নথিভুক্ত করা হবে। জরুরি পরিস্থিতিতে জল সংগ্রহের সুবিধার্থে জলের নতুন উৎস তৈরির বিষয়েও পরীক্ষা করা হবে।
এমনিতেই বস্তি ও ঘিঞ্জি এলাকার মূল সমস্যা হল রাস্তার সরু গঠন, যা দমকলের বড় গাড়ি প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। পাশাপাশি, অবৈধ পার্কিং এবং রাস্তার দখলদারি সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তোলে। এ ছাড়া, অগ্নিকাণ্ডের সময় জলের উৎস খুঁজে পাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বৈঠকে ঠিক হয়েছে, পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে ডিভিশন লেভেলে প্রতি মাসে একটি করে বৈঠক করতে হবে। তৈরি করা হবে হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে বস্তি এলাকাগুলিতে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচার শুরু হবে। দমকল বিভাগ স্থানীয় বাসিন্দাদের অগ্নি-নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন করতে প্রশিক্ষণ দেবে। বিশেষ করে অগ্নিকাণ্ডের সময় দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোর কৌশল শেখানো হবে। এই প্রচার কার্যক্রমে পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির সাহায্য নেওয়া হবে।
দমকল ও পুলিশ বিভাগের মধ্যে যোগাযোগ আরও মজবুত করতে ডিভিশন স্তরে প্রতি মাসে একটি বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও, একটি হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হবে, যাতে জরুরি তথ্য দ্রুত ভাগ করা যায়। বৈঠক এবং থানার সঙ্গে দমকলবাহিনীর আলোচনা হবে মূলত স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে।
শনিবার নিউ আলিপুরের দুর্গাপুর সেতুর নীচে অবস্থিত একটি বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এই ঘটনায় প্রায় ৩০০টি ঝুপ়ড়ি পুড়ে যায়। ঘটনাস্থল এতটাই ঘিঞ্জি হওয়ায় সঠিক সময়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয় দমকল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অবশ্য অভিযোগ, দমকল প্রথমে সেতুর উপর থেকে আগুন নেভানোর চেষ্টা করায় দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার পর দমকল বিভাগ তাদের কৌশল ও পরিকাঠামো উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দমকলের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য আধুনিক সরঞ্জাম কেনার পাশাপাশি কর্মীদের আরও উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সঙ্কীর্ণ এলাকায় প্রবেশের জন্য ছোট এবং কার্যকরী যান কেনার বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।