ছবি: এএফপি।
বেলজিয়ামে রয়েছি বছর চার। ভারতে আমরা ‘বেলজিয়ান গ্লাস’ নিয়ে কথা বললেও স্থানীয়রা গর্ব করে এখানকার বিয়ার, চকোলেট আর টিনটিনের কথাই বলেন। এবার সেই তালিকায় ঢুকল জাতীয় ফুটবল দল। বলা হচ্ছে, এই দল বেলজিয়ামের ‘গোল্ডেন জেনারেশন অব ফুটবল’।
শুক্রবার ব্রাজিলকে কোয়ার্টার ফাইনালে হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্নকে উস্কে দিয়েছে দলটা। ৮৬’তে আর্জেন্টিনার কাছে সেমিফাইনালে হেরে বিশ্বকাপের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছিল বেলজিয়ামবাসীর। আবার তাঁরা স্বপ্ন দেখছেন। এ দেশে ফুটবল লিগ রয়েছে। কিন্তু তার মান কখনওই লা লিগা, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের মতো নয়। তাই এই লিগে খেলে নামডাক হলে খেলোয়াড়রা ইউরোপের অন্য দেশের লিগে খেলতে চলে যান।
এ দেশের রাজনীতি আবর্তিত হয় তিনটি ভাষাকে ঘিরে। ফ্লেমিশ, জার্মান, ফরাসি—এই তিন ভাষায় দেশের বিভিন্ন অংশে কথা বলা হয়। বেলজিয়াম দলেও ভাষাগত ভাগ আছে। ফেলাইনি, অ্যাজার ফরাসি বলে। কুর্তোয়া বলে ফ্লেমিশ। দলে পরস্পরের কথোপকথনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় ভাষাগত জাতীয়তাবাদ। এ সব এড়াতে জাতীয় দলের ম্যানেজার রবার্তো মার্টিনেজ নিয়ম করেছেন, দলের মধ্যে শুধু ইংরেজিতে কথা বলতে হবে। শুক্রবারের জয় অবশ্য সব ভাষাভাষীকেই উদ্বেল করে দিয়েছে। গলায় হলুদ-লাল-কালো রঙের মালা। গায়ে ‘রেড ডেভিলস’-এর জার্সি। হাতে বিয়ার ভর্তি মাগ। সেলিব্রেশন চলছে।
২০১৬ সালে ইউরো কাপে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছিল বেলজিয়াম। সে সময় বেলজিয়ামবাসী যাতে ফ্রান্সে গিয়ে দলকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে, সে জন্য ব্রাসেলস এয়ারলাইন্স অনেক ছাড়ে টিকিট বিক্রি শুরু করেছিল। এ বারও নিশ্চয় তা শুরু হবে। তবে ব্রাজিলকে হারানোর আনন্দে ইতিমধ্যেই ছাড় দিচ্ছে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলো।
পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার আমি। চন্দননগরের মেয়ে। আর পাঁচ জন বাঙালির মতো ছোট থেকেই আমি ব্রাজিলের সমর্থক। তাই শুক্রবার চরম দ্বিধায় পড়েছিলাম। এক দিকে যে দেশে অন্ন সংস্থান হচ্ছে তারা, অন্য দিকে আশৈশব ভালবাসা।
শেষ পর্যন্ত কিন্তু আমার মনও জড়িয়ে গেল ‘রেড ডেভিলস’-এর সঙ্গে! আনন্দে লাল জার্সি পরে ঘুরছি আমিও।