মস্কোয় শ্রদ্ধা ইয়েভগেনি প্রিগোঝিনকে। ছবি: রয়টার্স।
মস্কোর উত্তরে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ভাড়াটে সেনাবাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোঝিনের। এ বার সেই ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন বেলারুসের প্রেসিডেন্ট অ্যালেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো। তিনি দাবি করলেন, মস্কো দখলের ব্যর্থ অভিযানের পর এক বার নয়, দু’-দু’বার তিনি ওয়াগনার প্রধানকে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু পাত্তা দেনননি একদা পুতিনের দক্ষিণহস্ত।
জুন মাসে অস্ত্রশস্ত্র না পাওয়ার দাবি তুলে পুতিনকে উচ্ছেদ করতে মস্কো দখলে বেরিয়েছিল ওয়াগনার। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সেই অভ্যুত্থান স্থগিত ঘোষণা করেন প্রিগোঝিন। তার পর ভলগা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। বেলারুসের প্রেসিডেন্টের মধ্যস্থতায় কোনও রকম প্রশাসনিক শাস্তির মুখে পড়তে হয়নি রাশিয়ার সেনাকর্তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা প্রিগোঝিনকে। তাঁকে বেলারুসে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথাও শোনা গিয়েছিল সেই সময়। কিন্তু গত বুধবার রহস্যজনক পরিস্থিতিতে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর। সেই সঙ্গে প্রাণ হারান ওয়াগনারের অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা দিমিত্রি উটকিনও। তাঁদের মৃত্যুর পিছনে কি পুতিনের হাত রয়েছে? এ নিয়ে পশ্চিমের সংবাদমাধ্যমের উৎসাহের অন্ত নেই। যদিও ক্রেমলিনের কাছে এমন কোনও দাবি ধোপে টেকেনি। এ বার ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন পুতিনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত লুকাশেঙ্কো।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে প্রকাশ, শুক্রবার লুকাশেঙ্কো দাবি করেন, তিনি দু’বার প্রিগোঝিনদের সতর্ক করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, তাঁদের উপর হামলা হতে পারে। প্রাণ হারাতে পারেন। বেলারুসের নেতা জানিয়েছেন, জুন মাসে বিদ্রোহের সময়ই তিনি প্রিগোঝিনকে সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘‘মস্কোর দিকে এগোতে থাকলে মৃত্যু কিন্তু অবধারিত।’’ তার জবাবে প্রিগোঝিন বলেছিলেন, ‘‘যা খুশি হোক, আমি মরতেও পারি।’’
লুকাশেঙ্কো দাবি করেছেন, এই কথোপকথনের পরে কখনও প্রিগোঝিন এবং উটকিন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। সেই সময়ও লুকাশেঙ্কো তাঁদের সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘‘ছেলেরা— সাবধানে চলাফেরা কর।’’ তবে লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে কবে কথোপকথন হয়েছিল তা অবশ্য জানাননি বেলারুসের নেতা। এই ঘটনার পিছনে পুতিনের হাত আছে বলেও মনে করেন না লুকাশেঙ্কো। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি পুতিনকে চিনি। তিনি নিশ্চয়ই হিসাব করছেন, খুব শান্ত ভাবে। আমি ভাবতেও পারি না পুতিন এটা করিয়েছেন। তাই পুতিনকে দোষ দেওয়ার কারণ নেই। এটা অত্যন্ত অপেশাদার কাজ হয়েছে।’’
শুধু লুকাশেঙ্কোই নয়, ক্রেমলিনের পক্ষ থেকেও ঘটনার দায় অস্বীকার করা হয়েছে। পশ্চিমের সংবাদ মাধ্যমকেও এ নিয়ে বাড়তি উৎসাহ দেখানোর বিষয়ে কটাক্ষ করা হয়েছে। লুকাশেঙ্কো জানিয়েছেন, আপাতত বেলারুসেই থাকবে ওয়াগনার বাহিনী। যত দিন বেলারুসের প্রয়োজন না মিটছে, তত দিন পর্যন্ত ওয়াগনারকে ঘাঁটি সন্ধানে বেরোতে হবে না, এমনই ইঙ্গিত লুকাশেঙ্কোর গলায়।