ভারত-আমেরিকা-জাপানের যৌথ নৌ-মহড়াকেও চ্যালেঞ্জ ছুড়তে শুরু করল চিন। সরাসরি নয়। নজরদারির ঢঙে। দক্ষিণ চিন সাগরের গায়েই আয়োজিত এই নৌ-মহড়ায় অংশ নেওয়া সবচেয়ে বড় যুদ্ধজাহাজ মার্কিন এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার ইউএসএস স্টেনিসের পিছনে সর্বক্ষণ ঘুরছে একটি চিনা যুদ্ধজাহাজ।
দক্ষিণ চিন সাগরে চিনা ‘আগ্রাসনের’ অভিযোগ নিয়ে যখন আন্তর্জাতিক মহলে চাপানউতোর তুঙ্গে, তখন বার্ষিক নৌ-মহড়া মালাবার এক্সারসাইজ দক্ষিণ চিন সাগরের গা ঘেঁষে আয়োজন করা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, বলছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। আমেরিকা এবং জাপান চিনের বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই সরব। ভারতও এই আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে। আমেরিকা ও জাপানের সঙ্গে যৌথ নজরদারিতে রাজি না হলেও আলাদা করে ভারতও দক্ষিণ চিন সাগরে নজরদারি জাহাজ পাঠিয়েছে একাধিকবার। কিন্তু এ বার মালাবার এক্সারসাইজ জাপানের ওকিনাওয়ান দ্বীপপুঞ্জের কাছে আয়োজিত হয়েছে। অর্থাৎ দক্ষিণ চিন সাগরের একেবারে গা ঘেঁষেই। বেজিং মনে করছে, এই মহড়ার অছিলায় দক্ষিণ চিন সাগরের আশপাশের বিভিন্ন দেশকে বার্তা দেওয়া চেষ্টা চলছে যে দক্ষিণ চিন সাগরের অধিকার নিয়ে যে বিবাদ, তাতে আমেরিকা, ভারত এবং জাপান চিনের বিরুদ্ধে একজোট। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদরা বলছেন, চিন এখন প্রমাণ করতে চাইছে, আমেরিকা-ভারত-জাপান একজোট হলেও চিন পরোয়া করে না।
আরও পড়ুন:
দক্ষিণ চিন সাগরের কাছেই বিরাট নৌ-মহড়ায় ভারত-আমেরিকা-জাপান
এফ-১৮ যুদ্ধবিমানের বিশাল সম্ভার এ বারের মালাবার এক্সারসাইজে অংশ নিয়েছে মার্কিন এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার ইউএসএস স্টেনিস। জাপানি হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার, ভারতীয় গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেট এবং করভেটও এই মহড়ায় অংশ নিয়েছে। চিন একটি নজরদার রণতরী পাঠিয়ে দিয়েছে ওকিনাওয়ান দ্বীপপুঞ্জের কাছে। সেই নজরদার রণতরীটি একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ইউএসএস স্টেনিসের পিছনে পিছনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি স্পর্ধা দেখানোর কৌশল। পিপলস লিবারেশন আর্মির নৌসেনা আমেরিকা-ভারত-জাপানের যৌথ শক্তিকে বার্তা দিতে চাইছে, চিন ভীত নয়। বরং চিন সারাক্ষণ নজরে রাখছে মহড়ার সব গতিবিধি। মহড়ার মাঝখানে অবশ্য ঢোকেনি চিনা যুদ্ধজাহাজটি। ভারত, জাপান ও আমেরিকার নৌসেনা যে এলাকাটি ঘিরে রেখেছে, তার মাঝে ঢুকে পড়লে অনাবশ্যক জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে চিনা নৌসেনার কর্তারা জানেন। তাই নির্দিষ্ট একটি দূর্তব বজায় রেখেই সেটি টহলদারি চালাচ্ছে। আর মহড়ায় অংশ নেওয়া বৃহত্তম যুদ্ধজাহাজটির পিছু ধাওয়া করে বার্তা দিতে চাইছে, চ্যালেঞ্জ ছুড়তে প্রস্তুত বেজিং। ওয়াকবহাল মহল অবশ্য বলছে, আমেরিকা-ভারত-জাপানের মধ্যে তৈরি হওয়া এই মজবুত অক্ষকে নিয়ে বেজিং যথেষ্ট চিন্তিত। তাই অবজ্ঞা করার কৌশল নিতে পারল না তারা। স্পর্ধা দেখাতে গিয়ে বুঝিয়ে দিল, এই মহড়াকে হালকা ভাবে নিতে পারছে না চিনা নৌসেনা।