শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি।
পদ্মা সেতু, কর্ণফুলির সুড়ঙ্গপথ, মেট্রো রেলের মতো নজরকাড়া উন্নয়ন, রাস্তাঘাটে অর্থনৈতিক প্রগতির ফলাও প্রচার, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ কি তা হলে হই হই করে ফিরছে?
প্রশ্ন শুনে চোয়াল শক্ত হয়ে গেল শাসক দলের মাঝারি সারির এক নেতার। বললেন, “উন্নয়ন তো দেখবেনই। পারলে পথচলতি মানুষের সঙ্গে দু’টো কথাও বলবেন, তবেই বুঝবেন আসল ছবিটা।”
এ ছবি আসল ছবি নয়?
শাসক দলের ওই নেতার জবাব, “মানুষের ক্ষোভের আঁচটা যে মাত্রা ছাড়াচ্ছে, নেতারা কতটা বুঝছেন জানি না, আমরা দিব্য টের পাচ্ছি। এখনই নির্বাচন হলে ৩০০-র মধ্যে ৫০টা আসন যে পাব, নিশ্চিত করে বলতে পারছি না কেউই। আপনি দেখছেন উন্নয়ন, বাংলাদেশের মানুষের চর্চায় আমাদের কিছু নেতার লুটপাট, অর্থ পাচার। জিনিসের দাম আগুন। জ্বালানি তেলের দাম ডাবল করে দেওয়া হল। দফায় দফায় লোডশেডিং। তার উপরে আগের নির্বাচনের ফাজলামো ভুলছেন না মানুষ!”
সব কিছু ঠিকঠাক চললে আগামী বছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন মিটে যাওয়ার কথা বাংলাদেশে। তার আগে এই হোঁচটের ধাক্কা যেন প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কণ্ঠে। দলের দু’নম্বর নেতার সাফ কথা, “এ বারের নির্বাচন বেশ টাফ হবে। নেত্রীশেখ হাসিনার জীবন বিপন্ন। রাজনীতিতে না-পেরে তাঁকে হত্যার চক্রান্ত চলছে।” তবে এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় তাঁরা তৈরি বলেও জানিয়েছেন কাদের। তাঁর কথায়, “৭৫ সালের পরে আওয়ামী লীগ এখন সব চেয়ে বেশি সংগঠিত। শরিকদের সঙ্গে সমন্বয়ও চমৎকার। ও দিকে নেতাদের ঝগড়ায় বিএনপি যে কোনও দিন ভাঙল বলে।”
বাংলাদেশে সংসদের প্রধান বিরোধী দল সদ্য প্রয়াত হুসেইন মহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি। তবে শক্তির বিচারে ময়দানের প্রধান বিরোধী দল খালেদা জিয়ার বিএনপি। জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, ঢাকার সাংসদ আবু হোসেন বাবলা বলেন, “আমরা দায়িত্বশীল বিরোধীরভূমিকা পালন করছি। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, তা ধরে রাখতে তাঁর ক্ষমতায় ফেরাটা জরুরি। বিএনপি-কে বিশ্বাস করেন না মানুষ।”
বিএনপি ২০১৮-র ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশ নিলেও পরে অভিযোগ করে, ভোট আগের রাতেই হয়ে গিয়েছে। অন্য বিরোধী দল এমনকি আওয়ামী লীগের শরিকেরাও সেটাই মনে করেন। এ বার আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপানের মতো দাতা দেশগুলি সরকারকে চাপে রাখতে জানিয়েছে— গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতেই হবে। কিন্তু বিএনপি-কে বাদ দিয়ে তা যে সম্ভব নয়, হাসিনা সরকার ভালই বুঝছে। বিএনপি-র প্রথম সারির প্রায় সব নেতাই এখন কারাগারে। কার্যত আত্মগোপন করে থাকা বিএনপি-র স্থায়ী কমিটির এক সদস্য ফোনে বলেন, “কারচুপির ভোটে ক্ষমতায় আসা এই সরকারকে আমরা অবৈধ সরকার বলি। হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকলে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়। আমরা তাই বলছি, এই সরকার নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিলেই একমাত্র বিএনপি ভোটে অংশ নেবে।” তাঁর অভিযোগ, ভোটে অংশ নেওয়ার জন্য চাপ দিতেই বিরোধী নেতাদের সরকার ‘মিথ্যা মামলা’ দিয়ে জেলে পুরেছে।
আওয়ামী লীগের দু’নম্বর কাদেরের কথায়, “এ বার বিরোধী জোট থেকে অনেক দল আমাদের জোটে আসতে চাইছে। আওয়ামি লীগের জয় নিয়ে বিরোধীদেরওসংশয় নেই।”
এক রসিক প্রৌঢ়কে রাজনীতির হাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করায় চোখ টিপলেন, রহস্য করে গেয়ে উঠলেন— ‘তুমি বন্ধু কালা পাখি, আমি যেন কী! সাদা সাদা, কালা কালা...’।