ফাইল চিত্র।
ঘরের পরে এ বার চাপ বাইরে থেকেও। স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প এবং জামাই জ্যারেড কুশনার আগেই তাঁকে ভোটে হার মেনে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এ বার সেই পরামর্শ দিলেন তাঁর পূর্বসূরি বারাক ওবামাও। কাল এক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওবামা বলেন, ‘‘মিস্টার ট্রাম্পকে আমি একটাই পরামর্শ দেব— এ বার অন্তত ভোটের ফল মেনে নিন। জো বাইডেনের জয় স্বীকার করুন। যা হওয়ার, তা হয়েই গিয়েছে। কিছু বদলানোর নয়। দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া এক জন মানুষ হিসেবে যদি নিজের ছাপ রাখতে চান, তা হলে হার স্বীকার করুন।’’
ট্রাম্প কিন্তু অনড়ই। তাঁর মুখে এখনও ভোট-চুরির অভিযোগ। বলেই চলেছেন, তিনি নাকি ষড়যন্ত্রের শিকার। শনিবার তবু এক বার মুখ ফস্কে বাইডেনের জয় স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু তার পরেই বলে বসেন, ‘‘এ বারের ভোটে জালিয়াতি না হলে, কোনও ভাবেই ওঁর জেতার কথা নয়। বাইডেন তো শুধু ধাপ্পাবাজ মিডিয়ার চোখে জয়ী!’’ ভোটের ফল কিন্তু সত্যিটা চোখে আঙুল দিয়েই দেখিয়ে দিচ্ছে। সরকারি ভাবে ঘোষণা না হলেও, ৩০৬টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট ঝুলিতে নিয়ে ট্রাম্পের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছেন বাইডেন। একাধিক প্রদেশে ভোটের ফলকে চ্যালেঞ্জ করা ট্রাম্পের সম্বল ২৩২। এরই মধ্যে খবর, বাধ্য হয়েই পেনসিলভেনিয়ার মামলা তুলে নিচ্ছে ট্রাম্প শিবির। এই প্রদেশে বাইডেনকে জয় এনে দিয়েছে একটা বড় অঙ্কের ভুয়ো তথা অবৈধ ভোট— অভিযোগ ছিল ট্রাম্পের। এই সংখ্যাটা নাকি প্রায় ৭ লক্ষ! কিন্তু সূত্রের খবর, এই দাবির পক্ষে যথাযথ তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করতে না-পেরেই গত কাল ফেডারেল কোর্ট থেকে অভিযোগের মূল অংশ তুলে নিয়েছেন রিপাবলিকানরা।
এই পরিস্থিতিতে পরাজয় স্বীকার করা ছাড়া কোনও গতি নেই ট্রাম্পের। ওবামাও বললেন, ‘‘আমি তো বলব, ভোটগণনা শুরুর দু’দিনের মধ্যেই ভোটের গতিপ্রকৃতি বুঝে বাইডেনের জয় মেনে নেওয়া উচিত ছিল ট্রাম্পের।’’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প নিজেও সেটা জানেন। তিনি অনড় শুধু জেদের বশেই।
ভোটে হারলেও তিনি যে সহজে ক্ষমতা ছাড়বেন না, এমন ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছিলেন ট্রাম্প। সূত্রের খবর, বাইডেনকে চাপে ফেলতে নানাবিধ হাতিয়ার শানাতেও শুরু করে দিয়েছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক হোয়াইট হাউসের এক উচ্চপদস্থ কর্তা জানান, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই চিনের উপর আরও একগুচ্ছ কঠোর পদক্ষেপ করতে চলেছেন ট্রাম্প। সূত্রের খবর, আমেরিকান সেনা থেকে শুরু করে জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত বহুবিধ তথ্যের উপর অবৈধ নজরদারি এবং হ্যাকিংয়ের অভিযোগেই চিনের উপর আঘাত হানতে চলেছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প জমানায় চিনের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ধাক্কা খেয়েছে। সদ্য নির্বাচিত আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে শুভেচ্ছা জানানোর ক্ষেত্রে প্রাথমিক জড়তা কাটিয়ে হালে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে বেজিং। এই আবহে ট্রাম্প যদি বাণিজ্য-সহ একাধিক ক্ষেত্রে চিনের উপর নতুন করে আরও নিষেধাজ্ঞা চাপান, বাইডেনের পক্ষে আগামী দিনে তা জটিলতা আনতে পারে বলে মনে করছেন কূটনীতিকদের একাংশ।
নিজেকে তৈরি রাখছেন বাইডেনও। ক্ষমতায় আসার প্রথম দিন থেকেই করোনা-যুদ্ধে নামার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। সূত্রের খবর, চলতি সপ্তাহেই করোনার সম্ভাব্য ভ্যাকসিন নিয়ে দেশের সংশ্লিষ্ট ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার সঙ্গে কথা বলবেন বাইডেন।