হাছান মাহমুদ। —নিজস্ব চিত্র।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অশান্তির ঘটনা শেখ হাসিনা সরকারের ভাবমূর্তিতে কালি ছেটানোর উদ্দেশ্যে সুপরিকল্পিত একটি চক্রান্ত বলে দাবি করছেন বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বৃহস্পতিবার কলকাতায় আনন্দবাজার পত্রিকার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ বলেন— “অশান্তিকে যে মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার চক্রান্ত হয়েছিল, তা হতে পারেনি। সরকার এবং আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা কঠোর মনোভাব নিয়ে সেই চক্রান্ত এখনকার মতো প্রতিহত করেছেন। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণ ভাবে নির্মূল করা গেলে তবেই এই চক্রান্ত সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ হবে। সেই লক্ষ্য ও কর্মসূচি নিয়ে বাংলাদেশের সরকার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে।”
মাহমুদ জানান, তিনটি উদ্দেশ্যে দেশজুড়ে অশান্তির এই পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এক, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নষ্ট করা। দুই, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করা এবং তিন, শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি দেশের ধর্মীয় অল্পসংখ্যকদের অনাস্থা তৈরি করা। এই কাজে সমাজমাধ্যমকে ব্যবহার করে উস্কানি দেওয়া হয়েছে। হাছান মাহমুদ বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই বলেছি, রাতের অন্ধকারে এই কাজ করা হয়েছে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে। সিসিটিভি-র ছবি দেখে ইকবাল নামে এক জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কোনও সন্দেহ নেই, তাকে টাকা কড়ি দিয়ে কেউ এটা করিয়েছে। কে, সেটা কয়েক দিনের মধ্যেই স্পষ্ট হবে।”
কারা এই পরিকল্পনা করেছে? জবাবে বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী বলেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতার সম্পর্ক যাদের চক্ষুশূল, যারা আমাদের ‘ভারতের দালাল’ বলে গালাগাল দেয়, করোনা কালেও লক্ষ্যণীয় উন্নয়নের জন্য এই সরকার বিশ্বজুড়ে বাহবা পাওয়ায় যাদের গাত্রদাহ হয়, তারাই এই কাজ করেছে। এদের একটা অংশ স্বাধীনতারও বিরোধিতা করেছিল। সেই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক বিরোধী বিএনপি যে এই চক্রান্তের পিছনে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।”
রংপুরে অশান্তির মূল ইন্ধনদাতা বলে যাকে ধরা হয়েছে, সে তো শাসক দলেরই ছাত্র কর্মী বলে সংবাদ মাধ্যমের খবর। তা হলে? প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ নেতার দাবি, “উদ্দেশ্যমূলক ভাবে এই ভুল খবর প্রচার করা হয়েছে। বহু আগেই তাকে ছাত্র লীগ বহিষ্কার করেছে।” মন্ত্রী জানান, চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালি বা রংপুর— সর্বত্র অশান্তির পরই প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগের কর্মীরা আক্রান্তদের সাহস জুগিয়েছেন, ত্রাণের ব্যবস্থা করেছেন। দেশজুড়ে সম্প্রীতি মিছিল করা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, “নেত্রী শেখ হাসিনা সংখ্যালঘু শব্দটা মানেন না। ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’— এই স্লোগান তিনিই দেন।” মন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশে ৩২ হাজার মণ্ডপে দুর্গাপুজো হয়। সরকার প্রতিটি পুজো কমিটিকে অর্থসাহায্য দেয়, পাহারার ব্যবস্থা করে। ধর্ম নির্বিশেষে সবাই উৎসবে মাতে। আমার শ্বশুর বাড়ি চট্টগ্রামের দেওয়ানজি পুকুর পাড়। সেই মহল্লার পুজো পুরস্কার পেলে আমার স্ত্রী তাতে গর্বিত হন।” তাঁর কথায়, বাংলাদেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক নন। অসাম্প্রদায়িক চেতনার মুক্তিযুদ্ধের নায়ক তাঁরা। চক্রান্তকারীদের হার সময়ের অপেক্ষা।
এ দিন বিধানসভায় গিয়ে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সৌহার্দ্য বিনিময় করেন হাছান মাহমুদ। কলকাতা প্রেস ক্লাবে সূচনা করেন ‘বঙ্গবন্ধু সংবাদ কেন্দ্র’-এর।