(বাঁ দিকে) মহম্মদ সাহাবুদ্দিন, (মাঝে) শেখ হাসিনা এবং মুহাম্মদ ইউনূস (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ প্রসঙ্গে সে দেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিনের মন্তব্যে মোটেই সন্তুষ্ট নয় অন্তর্বর্তী সরকার। হাসিনা আদৌ প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন কি না, তা নিয়েই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে ওই মন্তব্যে। এক সাক্ষাৎকার রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, হাসিনার পদত্যাগের কোনও প্রামাণ্য নথি তাঁর হাতে নেই। সাহাবুদ্দিনের এমন মন্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের একাংশ উষ্মাপ্রকাশ করেছেন। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের অভিযোগ, রাষ্ট্রপতি ‘মিথ্যাচার’ করছেন। রাষ্ট্রপতির এই ধরনের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ আসিফ বলেন, “এটি তাঁর (রাষ্ট্রপতির) শপথ লঙ্ঘনের শামিল।”
তিন মাসের বেশি সময় অতিক্রান্ত, হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়েছেন। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের সম্মতিক্রমে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনেরও আড়াই মাসের অধিক সময় পার হয়ে গিয়েছে। এত দিন পর রাষ্ট্রপতির এই মন্তব্যকে ‘স্ববিরোধী’ বলেও কটাক্ষ করেছেন আইন উপদেষ্টা। রাষ্ট্রপতির অপসারণের প্রচ্ছন্ন ‘হুমকি’-ও দিয়ে রেখেছেন তিনি। আসিফ বলেন, “বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী যদি আপনার শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা না থাকে, বা যদি কোনও গুরুতর অসদাচারণ করেন— সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি পদে আপনি থাকতে পারেন কি না, তা বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।”
কী কারণে রাষ্ট্রপতির মন্তব্যকে ‘স্ববিরোধী’ বলছে অন্তর্বর্তী সরকার? তার আভাস পাওয়া যেতে পারে ৫ অগস্ট জাতীয় উদ্দেশে রাষ্ট্রপতির ভাষণে। হাসিনা দেশ ছাড়ার পর তিনি সেই ভাষণ দিয়েছিলেন। সাহাবুদ্দিন নিজেই সেই দিনের ভাষণে জানিয়েছিলেন, হাসিনা তাঁর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং তিনি তা গ্রহণ করেছেন। সেই মন্তব্যের প্রায় সাড়ে তিন মাস পর এসে তিনি সাক্ষাৎকারে জানালেন, হাসিনার পদত্যাগের কোনও প্রামাণ্য নথি তাঁর হাতে নেই। তিনি কেবলই শুনেছেন যে হাসিনা পদত্যাগ করেছেন।
এই বিতর্কের আবহেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির বাসভবন ‘বঙ্গভবন’ থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। সেখানে লেখা হয়, “প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে প্রচার চালানো হয়েছে, তা জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সুস্পষ্ট বক্তব্য হল, ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সাংবিধানিক বৈধতার ওপর যত ধরনের প্রশ্ন জনমনে উদ্রেক হয়েছে, সেগুলোর উত্তর আপিল বিভাগের আদেশে প্রতিফলিত হয়েছে।”
তবে এই বিবৃতির পরও বিতর্ক থামছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের অন্দরে তো বটেই, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরাও এই মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। সমাজমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছেন অনেকেই। ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহের বক্তব্য, গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ‘হাসিনা এবং অবৈধ সরকারকে’ উৎখাত করা হয়েছে। এখানে পদত্যাগের কোনও ভূমিকা নেই বলেই মনে করছেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের যুব, ক্রীড়া ও শ্রম উপদেষ্টা সজীব ভুঁইয়াও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে ‘স্বৈরাচারী’ ও ‘খুনি’ বলে আক্রমণ শানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, রাষ্ট্রপতির কাছে মৌখিক ভাবে পদত্যাগ করেছিলেন হাসিনা। পদত্যাগপত্র নিয়ে বঙ্গভবনে যাওয়ার কথা ছিল হাসিনার। কিন্তু বিক্ষুব্ধ জনতা গণভবন (প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন)-এর কাছাকাছি চলে আসায় সেটি আর হয়ে ওঠেনি বলেই সমাজমাধ্যমে লিখেছেন যুব, ক্রীড়া ও শ্রম উপদেষ্টা।
বিষয়টি নিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সমাজমাধ্যমে তাঁর ব্যক্তিগত হ্যান্ডল বা প্রধান উপদেষ্টার হ্যান্ডল, কোনও জায়গাতেই এই বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি তিনি। যদিও সোমবার থেকে এখনও পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার সমাজমাধ্যম হ্যান্ডল থেকে অন্য একাধিক বিষয়ে পোস্ট করা হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক রয়েছে। সরকারি একাধিক সূত্রকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’-য় উল্লেখ, রাষ্ট্রপতির মন্তব্য নিয়ে আলোচনা হতে পারে ওই বৈঠকে।