প্রতীকী ছবি।
বাংলাদেশে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের হদিস পেয়েছে সেখানকার পুলিশ ও গোয়েন্দারা। বিভিন্ন জায়গা থেকে কর্মী সংগ্রহ করে নতুন এই সংগঠনের নেতারা পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা শিবিরে নিয়ে যেত। সেখানে তাদের জঙ্গি ভাবধারায় দীক্ষিত করার পাশাপাশি অস্ত্র শিক্ষা দেওয়া হত। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গত ২ বছরে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে অন্তত ৫৫ জন তরুণ নতুন এই জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’-য় নাম লিখিয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)। তাদের মধ্যে ৩৮ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে সংগঠনের শীর্ষ স্তরের ৭ জঙ্গিকে, যার মধ্যে শাহ মহম্মদ হাবিবুল্লা (৩২) নামে এক জন ইমাম রয়েছে, যে ওই মাদ্রাসাটি পরিচালনা করত।
নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে আফগানিস্তান ফেরত ‘মুজাহিদ’ জঙ্গিদের দিয়ে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি উগ্রপন্থী গোষ্ঠী তৈরি করিয়েছিল পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। ২০০১-এ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ও জামাতে ইসলামির জোট ক্ষমতায় আসার পরে এরা বাংলাদেশ জুড়ে দাপাদাপি শুরু করে। এমনকি ভারতেও নাশকতা চালায় এরা। সেই সময়ে জঙ্গিদের প্রশাসনিক মদতের বিষয়টি পরে সামনে আসে। বিরোধী দল আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য একাধিক বার এই জঙ্গিদের ব্যবহার করার অভিযোগ আদালতে প্রমাণ হয়েছে। সেই আমলের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং বিএনপির যুবনেতা লুৎফুজ্জামান বাবর এই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাদণ্ড ভোগ করছেন। উত্তর-পূর্ব ভারতের আলফা এবং অন্য জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গেও এদের লেনদেন সামনে আসে চট্টগ্রামে সরকারের শিল্প দফতরের জেটিতে জাহাজে করে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র খালাস করে ১০টি ট্রাক ওঠানোর সময়ে ধরা পড়ে। জামাতে ইসলামির শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামী সেই সময়ে ছিলেন বাংলাদেশের শিল্পমন্ত্রী। পরে একাত্তরের মানবতা-বিরোধী অপরাধে নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হয় ২০১৬-র ১১ মে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতি নেওয়ায় নিরাপত্তা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে বেশ কিছু সংগঠন বিলুপ্ত হয়। জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) এবং আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি) নামে দু’টি সংগঠন এখনও নিরাপত্তা বাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে বাংলাদেশে অস্তিত্ব বজায় রেখে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে নতুন আর একটি জঙ্গি সংগঠনের হদিশ বেশ চমকপ্রদ।
র্যাব জানিয়েছে, গত কয়েক মাস ধরেই এদের কাজ কর্ম তাদের নজর কেড়েছে। সম্প্রতি সংগঠন ছেড়ে ঘরে ফেরা এক তরুণকে আটক করে নতুন জামাতুল জঙ্গি দলের পরিকাঠামো সম্পর্কে তারা জানতে পারে। তার পরেই অভিযান শুরু হয়। ইমাম হাবিবুল্লা মাদ্রাসার নামে চাঁদা তুলে সংগঠনের কাজে লাগাত। অন্য নেতারা নানা জায়গার ধর্মপ্রাণ তরুণদের চিহ্নিত করে তাদের সংগঠনে টানত। ৫৫ জন তরুণের সকলে ২ বছর থেকে গত দেড় মাসের মধ্যে বাড়ি ছেড়েছিল বলে জানিয়েছে র্যাব।