বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ছবি সংগৃহীত।
বন্ধুতার পথে নানা বাধা দূর হটেছে। গত এক দশকে পরস্পরের অনেক কাছে এসেছে ভারত ও বাংলাদেশ। এ বার দু’দেশের মানুষের জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়ার জন্য সওয়াল করলেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। সোমবার বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের স্বীকৃতির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ফোরাম ফর সেকুলার বাংলাদেশ তথা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন। মোমেনের কথায়, “ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানে অবাধ চলাচলের সুবিধা থাকা উচিত। সবার উন্নয়নের স্বার্থেই আমাদের আরও বেশি যোগাযোগ বাড়ানো উচিত।”
১৯৭১-এর ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীই প্রথম কোনও রাষ্ট্রের তরফে বাংলাদেশের স্বতন্ত্র স্বাধীন সত্তাটিকে স্বীকৃতি দেন। ভারতের স্বীকৃতির পরেই আসে ভুটানের স্বীকৃতিও। ভারত ও বাংলাদেশের বন্ধুতার স্মারক এই দিনটিকে ‘মৈত্রী দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে এ বছরই ওই দিনটি দেশে, বিদেশে বিভিন্ন দূতাবাসের মাধ্যমে পালন করছে ঢাকা ও দিল্লি। মুক্তিযুদ্ধ তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধী অপশক্তিকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করতেও এই দিনটির বিশেষ মর্যাদা থাকা উচিত বলে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। বাংলাদেশের রাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনারের উপস্থিতিতে এই দিনটি তাঁরা উদযাপনও করছেন গত দেড় দশক ধরেই। এ দিনের সভায় ভারতের হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীও এই দিনটির উদযাপন এক দীর্ঘ নাগরিক আন্দোলনের ফসল বলে মন্তব্য করেন। উদ্যোক্তাদের তরফে লেখক-তথ্যচিত্র পরিচালক শাহরিয়ার কবির, মুক্তিযোদ্ধা তথা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকরাও এ দিন ইন্দিরা গাঁধীর নামে ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার নাম রাখার দাবি তুলে ধরেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের বিজয়ের মাসে পাকিস্তানের প্রভাবে উপমহাদেশে জঙ্গিবাদের বাড়াবাড়ি নিয়েও সরব শাহরিয়ার কবিররা।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সীমান্ত খুলে দিয়ে বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য ভারতের সহৃদয়তার কথা বলেন, তখন পশ্চিমবঙ্গে কর্মরত ব্রিটিশ সমাজকর্মী জুলিয়ান ফ্রান্সিস। বাংলাদেশের দুর্দিনের বন্ধু ভারত পাশে না-থাকলে মাত্র ন’মাসের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না-বলেও এ দিন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ঢাকার বিদেশমন্ত্রী। ভারতের সহায়তা এবং সেনাদের বলিদান ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যা আরও বাড়ত। বন্ধুত্বের এই ঐতিহ্য মনে করিয়ে মন্ত্রী মোমেনসাহেব বলেন, “মনমোহন সিংহ ও নরেন্দ্র মোদীর আমলে ভারত, বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নততর হয়েছে। অনেক জটিল বিষয়ের নিষ্পত্তি হয়েছে (যেমন ছিটমহল বিনিময় বা পারস্পরিক সমুদ্রসীমা নির্ধারণ)। এই বন্ধুত্ব আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই এখন লক্ষ্য।”