বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়। —ফাইল চিত্র।
চলতি বছরের জুলাইয়ে কোটা-সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে সদ্য শেষ হওয়া অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে বাংলাদেশে অন্তত ৩৭০ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দলটি। এঁদের নাম, হত্যার দিন ও হামলার স্থানের তথ্য দিয়ে একটি তালিকা সোমবার প্রকাশ করেছে শেখ হাসিনার দল। দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, এই তালিকা তারা রাষ্ট্রপুঞ্জের তথ্যানুসন্ধানী দলের হাতে তুলে দেবে। যদিয়ো এই তালিকা একেবারে প্রাথমিক। সরকারের অসহযোগিতায় নিহত সকলের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের উপরে বহুমুখী চাপ থাকায় তারাও বহু হত্যাকাণ্ডের খবর বা সবিস্তার তথ্য প্রকাশ করতে পারেনি। সেই তথ্য সংগ্রহ করে পরে এই তালিকায় সংযোজন করা হবে।
জুলাই থেকে অক্টোবর— এই চার মাসে বাংলাদেশে ঐতিহাসিক পটপরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। কোটা-সংস্কারের আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে পর্যবসিত হয়ে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা দেশত্যাগ করে দিল্লিতে আশ্রয় নিয়েছেন। আন্দোলনকারীদের দমনে বলপ্রয়োগের অভিযোগ করে তাঁকে ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালে মামলা করেছে সরকার। পাশাপাশি নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সাবেক শাসক দলের নেতা-কর্মীরা। নিষিদ্ধ করা হয়েছে আওয়ামী লীগের শাখা ছাত্র লীগকে। গণরোষের অজুহাত তুলে খুন করা হয়েছে আওয়ামী নেতা-কর্মীদের। তারই তথ্য এ দিন প্রকাশ করল আওয়ামী লীগ। এই তালিকা থেকে দেখা যাচ্ছে, সব চেয়ে বেশি ৩১৭ জনকে খুন করা হয়েছে অগস্টে। তার
আগে জুলাইয়ে নিহত হয়েছিলেন ২২ জন আওয়ামী কর্মী। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে খুন করা হয়েছে যথাক্রমে ১১ ও ২২ জনকে। নিহতদের মধ্যে ২২৮ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। পিটিয়ে ও কুপিয়ে খুন করা হয়েছে ১০০ জনকে। গুলিতে নিহত ২৩ জন। তবে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ থেকে রেহাইয়ের রক্ষাকবচ দেওয়ায় এই সব হত্যা মামলার বিচার হবে না বলেই মনে করছেন আওয়ামী নেতৃত্ব।
গত কয়েক দিনে বাংলাদেশে ৬টি মেডিক্যাল কলেজ এবং ১৪টি সরকারি হাসপাতালের নাম পরিবর্তন করেছে ইউনূস সরকার। শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনা বা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধােদর নামে এই সব হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের নাম রেখেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের নোটিসে সেই সব নাম বদলে গিয়েছে। তবে তাজউদ্দিন আহমদ ও জিয়াউর রহমানের নামাঙ্কিত হাসপাতালগুলির নাম এখনও অক্ষত রয়েছে। আওয়ামী নেতৃত্বের অভিযোগ, মুক্তিযুদ্ধ ও শেখ মুজিবের স্মৃতি ভুলিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই স্বাধীনতা-বিরোধীদের নির্দেশে এই কাজ করছে সরকার। বিষয়গুলি নিয়ে সমাজমাধ্যমে বিরূপ মন্তব্যের শিকার হচ্ছে সরকার। অনেকেই বলছেন, দেশে দ্রব্যমূল্য মানুষের নাগালের বাইরে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই খারাপ। একের পর এক কারখানা বন্ধ হচ্ছে। বিদেশি মুদ্রার অভাবে কয়লা আমদানি বন্ধ হওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি ঝাঁপ ফেলছে। ভারতের আদানি পাওয়ার জানিয়ে দিয়েছে, বকেয়া না মেটালে ৭ তারিখ থেকে তারা বিদ্যুৎ বিক্রি বন্ধ করে দেবে। এই অবস্থায় নাম পরিবর্তনের মতো সস্তা কর্মসূচিকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার।
গত ২৪ অক্টোবর ক্যানসার সচেতনতা শিবিরে বক্তৃতার শেষে বাগেরহাটের সিভিল সার্জেন জালালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান ‘জয় বাংলা’ বলেছিলেন। বিএনপি বিক্ষোভ দেখানোর পরে রবিবার সরকার নোটিস দিয়ে ওই সিনিয়র চিকিৎসককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে ওএসডি করে। সোমবার তাঁকে চাকরি থেকেই অব্যাহতি দিয়েছে ইউনূস সরকার।