বাংলাদেশে জুলাই আন্দোলনের সময়ে পুলিশের রবার বুলেটে মৃত্যু হয় আবু সাঈদের। —ফাইল চিত্র।
নতুন বছরে বাংলাদেশের প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়াদের পাঠ্যপুস্তকে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সাহিত্যের পাশাপাশি ইতিহাসের বিষয়েও এই পরিবর্তন আসছে। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতার ঘোষণা সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কিছু সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে পাঠ্যপুস্তকে। বাংলা পাঠ্যপুস্তকে জায়গা পেয়েছে জুলাইয়ের গণ অভ্যুত্থানে ‘শহিদ’দের প্রসঙ্গও।
এত দিন বাংলাদেশের পড়ুয়ারা পাঠ্যপুস্তকে পড়ে এসেছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সূত্র উদ্ধৃত করে ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, এই অংশটি বদলে যাচ্ছে নতুন পাঠ্যপুস্তকে। নতুন সংস্করণ অনুসারে, ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পরে ২৭ মার্চ মুজিবর আবার স্বাধীনতার ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশের পঞ্চম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বিষয়ের নতুন বইয়ে ‘পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা’ শীর্ষক লেখায় এই পরিবর্তন করা হয়েছে। এই বিষয়ের চতুর্থ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকেও একই বদল করা হয়েছে বলে সে দেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম এবং পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে। বস্তুত, এই স্বাধীনতা ঘোষণার ভিত্তিতেই বাংলাদেশে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়।
চতুর্থ শ্রেণির জন্য ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বিষয়ের নতুন পাঠ্যবইয়ে ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক লেখায় মুজিবুরের ৭ মার্চের বক্তৃতার পাশাপাশি জায়গা পেয়েছে মেজর জিয়াউর রহমানের ছবি। পঞ্চম শ্রেণির এই বিষয়ের পাঠ্যবইয়ে ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক অধ্যায়ে মুজিবুর এবং অন্য চার নেতার পাশাপাশি জায়গা পেয়েছে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ছবি। আগের পাঠ্যবইয়ে ওই অংশে মুজিবর এবং অন্য চার নেতার ছবি ছিল। নতুন সংস্করণে ওই অংশে প্রথমে রয়েছে ভাসানীর ছবি। তার পাশে রয়েছে মুজিবুরের ছবি। বাকি চার নেতার ছবিও রয়েছে তার সঙ্গে।
এ ছাড়া পঞ্চম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ে জায়গা পেয়েছে জুলাই গণ অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ। ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন অনুসারে, ওই বইয়ে ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ শীর্ষক প্রবন্ধে আবু সাঈদ এবং মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ছবি-সহ গণ অভ্যুত্থানে প্রয়াতদের স্মরণে লেখা সংযোজিত হয়েছে।
চলতি বছরে জুলাইয়ের গণ অভ্যুত্থানের জেরে গত ৫ অগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং তার পরবর্তী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ধাক্কায় ক্ষমতাচ্যুত হন হাসিনা। ওই আন্দোলনের সময়ে পুলিশের রবার বুলেটে মৃত্যু হয় নিরস্ত্র আবু সাঈদের। যা বাংলাদেশে হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনকে আরও ঐক্যবদ্ধ করেছিল। মুগ্ধও ছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক সক্রিয় কর্মী। বাংলাদেশে হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনের সময়ে আন্দোলনকারীদের কাছে জলের বোতল বিলি করতেন মুগ্ধ। আন্দোলনের সময়ে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় তাঁরও।
বাংলাদেশের পাঠ্যবইয়ে এই পরিবর্তনগুলির প্রসঙ্গে সে দেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান একেএম রিয়াজুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করে ‘প্রথম আলো’। তিনি বলেন, “জুলাই বিপ্লবের পর বিপ্লবের গ্রাফিতি-সহ বিষয়গুলোকে স্থান দেওয়ার একটি গণদাবি ছিল। এ বার ইতিহাসের বইয়ে না দিয়ে বাংলা-ইংরেজি বইয়ে জুলাই বিপ্লবের বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। আর মুক্তিযুদ্ধে অন্য নায়কদের আগে অবহেলা করা হয়েছে। এ বার তাঁদেরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অতিবন্দনা পরিহার করা হয়েছে। পাঠ্যবইকে রাজনৈতিক দলের প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা বন্ধ করা হয়েছে।”