গত বছর লন্ডনের আকাশে উড়েছিল এই ‘বেবি’ বেলুন।
ইচ্ছে ছিল হুডখোলা গাড়িতে চেপে রাজকীয় ভঙ্গিতে ভিড়ের উদ্দেশে হাত নাড়তে-নাড়তে বাকিংহাম প্যালেসে যাবেন। প্রাসাদে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে চা খাবেন। কিন্তু হাজার হাজার বিক্ষোভকারী আবারও তাঁকে ‘বেবি ট্রাম্প’ বেলুনে স্বাগত জানাতে তৈরি হচ্ছেন লন্ডনে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্রিটেন-সফর ঘিরে তাই তৈরি হয়েছে জল্পনা।
৩ থেকে ৫ জুন ব্রিটেন সফরে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। গত বছর ট্রাম্পের সফরে উত্তাল হয়েছিল লন্ডন। প্রায় ১ লক্ষ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা জাতিবিদ্বেষমূলক আচরণ, যৌন হেনস্থা ও আপত্তিকর নীতির প্রতিবাদ জানাতে। পার্লামেন্ট স্কোয়্যারের আকাশে উড়েছিল ‘বেবি ট্রাম্প’ বেলুন। ন্যাপি পরা, কমলা গায়ের রং, ট্রাম্পের মতো দেখতে বেলুন-শিশুটির মুখে রাগ ফেটে পড়ছে, হাতে মোবাইল ফোন। এ বারেও লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বিক্ষোভকারীদের বেলুন ওড়ানোর অনুমতি দিয়েছেন। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই টুইটারে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সাদিক স্পষ্ট জানিয়েছেন, ট্রাম্পের জন্য রেড কার্পেট বিছিয়ে দেবে না লন্ডন।
রাস্তায় নামবে অন্তত হাজার দশেক পুলিশ। রিজেন্ট পার্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসভবন উইনফিল্ড হাউসের বাইরে বসানো হয়েছে ব্যারিকেড। কারণ ট্রাম্প ওখানেই উঠবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য খরচ হবে আনুমানিক ২ কোটি ৫০ লক্ষ পাউন্ড।
বিক্ষোভের আঁচ পেয়েই ঠিক করা হয়েছে, সাধারণ মানুষের থেকে দূরে রাখা হবে ট্রাম্পকে। অন্য কোনও রাষ্ট্রনেতা ব্রিটেন সফরে এলে হুডখোলা গাড়িতে চেপে কনভয় করে বাকিংহাম প্যালেসে যান। পথের দু’ধারে জড়ো হওয়া মানুষ তাঁকে স্বাগত জানান। রাষ্ট্রনেতার গাড়ির পাশে পাশে যায় ঘোড়সওয়ার বাহিনী। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমন কোনও সুযোগই পাবেন না। প্রেসিডেন্টের বিশেষ লিমুজ়িন ‘বিস্ট’-এ চেপে সোজা বাকিংহামে ঢুকবেন তিনি। মানুষ শুধু ‘বিস্ট’কেই দেখতে পাবেন। ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাগত জানানো হবে বাকিংহাম প্রাসাদের বাগানে। উপস্থিত থাকবেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
এর আগে ব্রিটেন সফরে এসে বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। ইরাক যুদ্ধ তখন সবে শেষ হয়েছে। আর এক প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা অবশ্য উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন। তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে দক্ষিণ লন্ডনের একটি স্কুলে যান। দুই রাষ্ট্রনেতা পড়ুয়াদের সঙ্গে টেবিল টেনিস খেলেছিলেন। ট্রাম্প নিজের চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে ব্রিটেনে আসছেন। ইভাঙ্কা, ডোনাল্ড জুনিয়র, এরিক, টিফ্যানির সঙ্গে থাকবেন জামাই অর্থাৎ ইভাঙ্কার স্বামী জ্যারেড কুশনার এবং এরিকের স্ত্রী লারা-ও।
রাজপরিবারের সবাই অবশ্য মার্কিন অতিথিদের সঙ্গে দেখা করবেন না। ডাচেস অব সাসেক্স মেগান যেমন। বরাবরই ট্রাম্প-বিরোধী তিনি। তাঁর স্বামী রাজকুমার হ্যারি অবশ্য দেখা করবেন। গত বার লন্ডনে এসে ৯৩ বছর বয়সি রানির মুখের সামনে দিয়ে হেঁটে আপত্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন ট্রাম্প। সবাই চিন্তায়, এ বার না নতুন কিছু করে বসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ইতিমধ্যেই ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘টেরেসা মে-কে সরিয়ে বরিস জনসন চমৎকার প্রধানমন্ত্রী হবেন। ওঁকে আমার খুব পছন্দ।’’ আর কী কী বলবেন তিনি, সে সব শোনার অপেক্ষায় ব্রিটেন।