Salman Rushdie

Salman Rushdie: ভ্যালেন্টাইন দিবসে এসেছিল খোমেইনির ফতোয়া, সেই কাহিনিও রুশদির ‘বেস্ট সেলার’

রুশদি তাঁর স্মৃতিচারণায় লিখেছেন, খোমেইনির মৃত্যু-ফতোয়ার পরেই লন্ডনের ইসলিংটনে নিজের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছিল তাঁকে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২২ ১৫:৪৫
Share:

খোমেইনি এবং রুশদি। ফাইল চিত্র।

ঘটনাচক্রে, সেটা ছিল ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’। ১৯৮৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। তাঁর পঞ্চম উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ লেখার ‘অপরাধে’ সলমন রুশদি শিকার হয়েছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা খোমেইনির মৃত্যু-ফতোয়ার। তার পরেই এক দশকের জন্য অন্তরালে যেতে হয়েছিল তাঁকে।

Advertisement

‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশিত হওয়ার প্রায় ২৫ বছর পর, ২০১২ সালে অন্তরালের সেই দিনগুলি লিপিবদ্ধ করে আস্ত একখানা বই লিখে ফেলেছিলেন রুশদি। যার নাম ‘জোসেফ আন্তন।’ আর ভারতীয় বংশোদ্ভূত লেখকের সেই বইটিও ঠাঁই পেয়েছিল ‘বেস্ট সেলার’ তালিকায়।

আসলে মৌলবাদী হামলার ভয়ে আত্মগোপনের সময় জোসেফ আন্তন ছদ্মনাম নিয়েছিলেন রুশদি। সে সময় তাঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টারা হামলাকারীদের নজর এড়াতে একটি ছদ্মনাম বাছতে বলেছিলেন তাঁকে। রুশদি নিজেই তৈরি করেন তাঁর দুই প্রিয় লেখক, জোসেফ কনরাড এবং আন্তন চেকভের নামের প্রথম অংশ নিয়ে ওই ছদ্মনাম।

Advertisement

সাড়ে তিন দশক আগে বছরে ১০ লক্ষ পাউন্ড! রুশদি জানিয়েছেন, অজ্ঞাতবাস-পর্বে টানা ১০ বছর ধরে নিরাপত্তার জন্য ওই বিপুল অঙ্কের অর্থ খরচ করতে হয়েছিল তাঁকে। অষ্টপ্রহর তাঁকে ঘিরে থাকত একটি পেশাদার নিরাপত্তা সংস্থার সশস্ত্র রক্ষী। ব্যবহার করতে হত বুলেটপ্রুফ গাড়ি।

রুশদি স্মৃতিচারণায় লিখেছেন, খোমেইনির ফতোয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরেই লন্ডনের ইসলিংটনে নিজের বাড়ি ছেড়ে দিয়ে নিরাপত্তা অফিসারদের সঙ্গে পালিয়ে যেতে হয়েছিল তাঁকে। প্রথম সপ্তাহটা কেটেছিল উস্টারশায়ারের একটি হোটেলের তালাবন্ধ ছোট্ট ঘরে। পরবর্তী সময়ে সমারসেট, অক্সফোর্ডশায়ার, গ্লুস্টারশায়ারে ২০টি পৃথক ‘সেফ হাউসে’ ছিলেন রুশদি। শেষের কয়েক বছর উত্তর লন্ডনের হ্যাম্পস্টেডের বিশপ অ্যাভিনিউয়ে বসবাস করেছিলেন।

গোপনে অতি ঘনিষ্ঠ দু’চার জন লেখক বা বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া ছাড়া বাড়ির বাইরে বার হতেন না তিনি। আন্তনের জবানিতে লেখা সেই আত্মজীবনীতে অজ্ঞাতবাস পর্বের বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছিলেন, ‘ওই ভয়ানক নীরবতায় নিজের জীবনকে বুঝতে পারছিল না সে। এই জীবন নিয়ে কী করবে, ভাবতে পারছিল না সেটাও।’

ক্রমাগত আত্মগোপনের জীবনের অবসাদে রুশদিকে ছেড়ে গিয়েছিলেন তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী মেরিয়ন ইউগিনস। পরে বিয়ে করেন এলিজাবেথ ওয়েস্টকে। সে বিয়েও অবশ্য টেকেনি। রুশদি বেঁচে গেলেও সে সময় মৌলবাদী হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর জাপানি ভাষায় অনুবাদকারী। আক্রান্ত হয়েছিলেন নরওয়েজিয়ান এবং ইতালীয় অনুবাদক।

২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে ‘ছদ্মনামে’র জীবন থেকে বেরিয়ে আসেন রুশদি। পাড়ি দেন আমেরিকায়। তার বছর কয়েক আগেই তেহরান ঘোষণা করেছিল, ধর্মদ্রোহের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে জারি হওয়া মৃত্যু-পরোয়ানা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। খোমেইনির অবশ্য মৃত্যু হয়েছিল ফতোয়া জারির কয়েক মাস পরেই। ১৯৮৯-এর ৩ জুনে। কিন্তু তাঁর ‘ফতোয়া’ যে সাড়ে তিন দশক পরেও জারি ছিল, শুক্রবার তা টের পাওয়া গেল নিউ ইয়র্কের শতকা ইন্সটিটিউশনের মঞ্চে। ২৪ বছরের হাদি মাতারের ছুরি আঘাতে। ঘটনাচক্রে, যে হামলাকারীর জন্ম ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশিত হওয়ার প্রায় এক দশক পরে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement