প্রতীকী ছবি।
চিনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ধীরে ধীরে কঠিন হচ্ছে বলে একযোগে স্বীকার করল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজ়িল্যান্ড। চিনের আগ্রাসন নীতি নিয়ে নতুন করে মুখ খুলেছে আমেরিকাও।
গত বছর থেকেই চিনের সঙ্গে সম্পর্ক অবনতি হতে শুরু করেছিল অস্ট্রেলিয়ার। করোনাভাইরাসের উৎস জানতে আন্তর্জাতিক স্তরে তদন্তের ডাক দিয়েছিল ক্যানবেরা। যাতে অসন্তোষ জানিয়েছিল বেজিং। উত্তর অস্ট্রেলিয়ার ডারউইনে একটি বাণিজ্যিক ও সামরিক বন্দরকে এক চিনা সংস্থার কাছে লিজ় দেওয়া রয়েছে। গত কাল রাতে অস্ট্রেলিয়ার এক প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম দাবি করে, ৯৯ বছরের সেই লিজ় নিয়ে পুনর্বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কট মরিসনের সরকার। ইয়ে চেং নামে যে চিনা শিল্পপতিকে ওই বন্দর লিজ় দেওয়া আছে, তিনি চিনা সেনার খুবই ঘনিষ্ঠ। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় ওই বন্দরটি চিনা সংস্থাকে আর ব্যবহারের জন্য না-ও দিতে পারে সরকার। ২০০৫ সালে প্রশান্ত মহাসাগরের অতি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল এলাকায় অবস্থিত ওই বন্দর চিনা সংস্থাকে লিজ় দেওয়া নিয়ে প্রবল অসন্তোষ জানিয়েছিলেন তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তৎকালীন অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলকে সে কথা তিনি জানিয়েওছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটি আপাতত প্রতিরক্ষা দফতরকে খুব সম্প্রতি এ বিষয়ে নিজের মতামত জানাতে বলেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিটার ডাটন সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন। বর্তমান অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছেন, জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে কোনও মতেই বিদেশি কোনও সংস্থাকে ওই বন্দর আর ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। বিদেশি বিনিয়োগ আইনের সংশোধনীর কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। যেখানে সরকার প্রয়োজন মনে করলে লিজ় বা বিনিয়োগ সংক্রান্ত অন্য কোনও সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
চিনের প্রতি অসন্তোষ জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার পড়শি দেশ নিউজ়িল্যান্ডও। চিন নিউজ়িল্যান্ডের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক সঙ্গী। অকল্যান্ডে আজ চিনা বাণিজ্যিক সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্ন জানিয়েছেন, চিনের সঙ্গে সহমত পোষণ ধীরে ধীরে কঠিন হচ্ছে তাঁদের পক্ষে। তাঁর কথায়, ‘‘গোটা বিশ্বে চিনের ভূমিকার পরিবর্তন হচ্ছে। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই যার সঙ্গে সহমত হতে পারছি না।’’ তবে যাবতীয় দ্বন্দ্ব দূরে সরিয়ে বেজিংয়ের সঙ্গে সুষ্ঠু ভাবে বাণিজ্যের আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
বহির্বিশ্বে চিনের আগ্রাসন নীতি নিয়ে গত কাল মুখ খুলেছেন আমেরিকান বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও। একটি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি জানিয়েছেন, বেজিং এখন দেশের ভিতরে দমন নীতি আর বাইরে আগ্রাসন নীতি নিয়ে চলার পক্ষে, যা আমেরিকা একেবারেই ভাল চোখে দেখছে না। ব্লিঙ্কেনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তা হলে কি চিনের সঙ্গে সম্মুখ সমরে যেতে চায় আমেরিকা? বিদেশসচিব বলেছেন, ‘‘তার ফল কোনও পক্ষের জন্যই ভাল হবে না।’’ আগ্রাসন নীতি বলতে মূলত তাইওয়ান আর হংকংয়ের উপরে চিনের আধিপত্যের বিষয়টি বুঝিয়েছেন ব্লিঙ্কেন। দমন নীতির ক্ষেত্রে উল্লেখ করেছেন চিনা উইঘুর সম্প্রদায়ের প্রতি বেজিংয়ের মনোভাব। আমেরিকায় চিনা দূতাবাস সাক্ষাৎকারটি নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। গত কাল জি-৭ বৈঠকে যোগ দিতে লন্ডন পৌঁছেছেন ব্লিঙ্কেন। চিন যেখানে আলোচনার অন্যতম বিষয় হবে।