সূর্য পুবদিকেই উঠবে, শীতে লোকে লেপ গায়ে দেবে, ইস্কুলে বেয়াড়া ছাত্রের মার খাওয়ার সম্ভাবনা শতকরা নব্বই ভাগ— ‘ইহাই জগতের নিয়ম’। ঠিক যেমন অলিখিত নিয়ম বলে, পুলিশ ছুটবে চোরের পেছনে, বেড়াল ছুটবে ইঁদুর ধরতে। কিন্তু পুলিশ ছুটবে বেড়াল ধরতে... এ কেমন কথা!
কিন্তু স্বর্গ-মর্তের জ্ঞানের বাইরেও তো অনেক কিছু ঘটে! তেমনই ঘটল দিন কয়েক আগে, সুদূর নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে। ঠিক ‘মন্ত্রবলে’ না হলেও হাইওয়ের সমস্ত ট্রাফিক থামিয়ে দেওয়া বেয়াড়া এক বিল্লিকে তাড়া করে ধরে গাড়িতে তুলল পুলিশ। চালান করা হল থানায়। আপাতত থানাই তার ঠিকানা।
সাউথ-ওয়েস্টার্ন মোটরওয়ে থেকে ফোন পেয়েছিল পুলিশ— ‘‘কমলা-সাদা একটা তুলোর বল এখানে যা লাফঝাঁপ শুরু করেছে, যে কোনও সময়ে বিপত্তি ঘটবে!’’ অকল্যান্ড সিটি ডিস্ট্রিক্ট পুলিশের টহলদার গাড়ি তো চলে এল প্রায় সঙ্গে সঙ্গে, কিন্তু কমলা-সাদা পোঁটলাটি গেল কোথায়? হঠাৎ অফিসারদের নজর গেল, হাইওয়ের দুই রাস্তার মাঝখানে কংক্রিটের পাঁচিলে সেঁটে রয়েছে সে। থাবার রং সাদা, গড়ন মাঝারি, চোখের রং নীলচে, কান খাড়া, লেজটা অবশ্য তেমন মোটা নয়। ‘ছানা’ বলাই যায়।
এক অফিসার এগোলেন সন্তর্পণে। কিন্তু হাজার হোক, বেড়াল! দু’পা যেতে না যেতেই সে দিল ছুট। অবিরাম গাড়ির স্রোত বয়ে চলা রাস্তার তিনটে লেন পেরিয়ে গেল পরপর। ‘গেল গেল’ রব উঠল আবার— গাড়ির তলায় না চলে যায়! হল না কিছুই। উল্টে হাতেকলমে প্রমাণ হল, প্রবাদবাক্য মেনে ন’টি না হলেও মার্জার জাতির পরমায়ু অক্ষয়।
শেষমেশ পুলিশকে হাইওয়ের একটা অংশ বন্ধই করে দিতে হল। পালাবার পথ নেই। তবু মরিয়া চেষ্টা! পুলিশে-বেড়ালে খানিক ছোটাছুটির পরে জিতল পুলিশই। নড়া ধরে আসামিকে তোলা হল গাড়িতে। ছবি উঠল। এই ফাঁকেই ওই অফিসার একটা ফোন করছিলেন। ফোনটা রেখেই তিনি দেখলেন— পাখি উড়েছে! গাড়ি ফাঁকা।
গাড়ি ছুটল থানায়। সেখানে আর এক প্রস্ত খোঁজাখুঁজি। ‘ধৃত’ তো গাড়ি থেকে নামেনি। তা হলে গেলটা কোথায়? সবাই যখন হাল প্রায় ছাড়বে ছাড়বে করছে, এমন সময়ে ক্ষীণকণ্ঠে ‘ম্যাও’! ড্যাশবোর্ডের ভেতর থেকেই আসছে আওয়াজটা। বোলাও তবে মিস্ত্রি। গাড়ির ড্যাশবোর্ডটা পুরো খুলে ফেলতে দেখা গেল, হিটিং ফ্যানের পাশে গুটুলি পাকিয়ে জুলজুল চোখে চেয়ে আছেন তিনি!
বেয়াড়া বেড়ালকে হাইওয়ের যে জায়গাটা থেকে গাড়িতে তোলা হয়েছিল, সেখান থেকেই একটা রাস্তা নেমে গিয়েছে অকল্যান্ডের মাইওরো এলাকায়। পুলিশই তাই আসামির নাম রেখেছে ‘মাইওরো’। ফেসবুকে গোটা পর্বের বিবরণ দিয়ে লিখেছে, ‘‘মাইওরো ভাল আছে। আস্তে আস্তে চাঙ্গা হয়ে উঠছে। আশা করা যায়, জলদিই ওকে ছেড়ে দেওয়া যাবে— ওর নিজের জগতে!’’