দু’সপ্তাহে অন্তত ৯০ বার আকাশপথে আইএস জঙ্গিদের উপর হামলা চালিয়েছে আমেরিকা। পাশাপাশি চলেছে ইরাকি ও কুর্দ সেনার আক্রমণ। কিন্তু সে সবে ‘পাত্তা’ না দিয়ে ইরাকের দিয়ালা প্রদেশের এক মসজিদে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটাল জঙ্গিরা। তাতে অন্তত ৭০ জন সুন্নি মুসলিম বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে। আহত ৫০-এর বেশি। ইরাকি প্রশাসনের দাবি, ওই এলাকার দুই সুন্নি গোষ্ঠীকে নিজেদের দলে টানার চেষ্টা করেছিল জঙ্গিরা। কিন্তু তারা রাজি না হওয়াতেই এই হামলা।
গত রাতে পেন্টাগনের সাংবাদিক সম্মেলনে মার্কিন প্রতিরক্ষাসচিব চাক হাগেল মন্তব্য করেছিলেন, “আইএস সাধারণ জঙ্গি সংগঠন নয়।...এত দিন যত জঙ্গি সংগঠন দেখেছি, এরা সে সব থেকে অনেক এগিয়ে।” বাস্তবিক। ত্রিমুখী হামলা সত্ত্বেও ইমাম ওয়েজ গ্রামের মসজিদে এ দিন যে ভাবে বিস্ফোরণ ঘটাল জঙ্গিরা তাতে এটা স্পষ্ট, সহজে কাবু করা যাবে না তাদের।
প্রায় একই মত মার্কিন সেনাকর্তা মার্টিন ডেম্পসিরও। গত কাল তিনি জানান, আইএস জঙ্গিদের কাবু করতে গেলে শুধু ইরাকের দিকে নজর দিলেই চলবে না। লাগোয়া সিরিয়ায়ও তাদের তাণ্ডব রোখা দরকার। তবে তিনি এ-ও মনে করেন, এই সমস্যার সমাধানে রাজনৈতিক মোকাবিলা দরকার। তা যদি না হয়, সে ক্ষেত্রে শুধু পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির সমস্যা বাড়বে না। আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলিও জঙ্গি-নাশকতার মূল লক্ষ্য হয়ে উঠবে।
তা হলে কি আইএস জঙ্গিদের নিকেশ করতে পুরোদস্তুর হামলার পথে হাঁটবে আমেরিকা? ওবামার ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, এখনও সে রকম সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রয়োজনে তা করতে হলে দু’বার ভাববে না আমেরিকা। কিন্তু তা হলে দ্বিতীয় যে মার্কিন সাংবাদিককে হত্যার হুমকি দিয়ে রেখেছে আইএস জঙ্গিরা, তাঁর কী হবে? জবাব নেই।
জবাব দিতে পারছে না ব্রিটেনও। এ দিন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ আইএসের এই উত্থানের জন্য সরাসরি ব্রিটেনের গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন। তাঁর যুক্তি, গত বছর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে যখন রাসায়নিক হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল, তখনই যদি তাঁর বিরুদ্ধে অভিযানে আমেরিকার পাশে ব্রিটেন দাঁড়াত তা হলে সমস্যা এত দূর গড়াতই না। কারণ সে ক্ষেত্রে গত বছরই ক্ষমতাচ্যুত হতেন আসাদ, সিরিয়া পেত নতুন প্রশাসক। সঠিক ভাবে জঙ্গি-দমন অভিযান শুরু হতে পারত সে দেশে। আরও প্রশ্ন ব্রিটেন থেকে বহু বাসিন্দা যে আইএস-এ নাম লেখাচ্ছে, তা জানা সত্ত্বেও কেন তৎপর হয়নি ডেভিড ক্যামেরন প্রশাসন? উত্তর নেই। তবে জেমস ফোলির খুনিকে ধরতে ব্রিটেন যে সব রকম চেষ্টাই করবে, তা পরিষ্কার। এ দিন জানা গিয়েছে, মুক্তিপণ চাওয়া ছাড়াও ফোলির জীবনের পরিবর্তে আমেরিকার জেলে বন্দি এক পাক মহিলা বিজ্ঞানীর মুক্তি দাবি করেছিল জঙ্গিরা। কিন্তু তা মানেনি আমেরিকা।