আতঙ্কে পালাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: এপি।
ছুরি নিয়ে পথচারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল জঙ্গি। শুক্রবার দুপুরে লন্ডন ব্রিজে এই হামলা উস্কে দিয়েছে দু’বছর আগের স্মৃতি। আজকের হামলায় অন্তত দু’জন নিহত হয়েছেন। যদিও জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা (এনএইচএস) সূত্রের খবর, নিহত হয়েছেন কম পক্ষে তিন জন। পাঁচ জন গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে আততায়ী।
বিকেলে লন্ডন মেট্রোপলিটান পুলিশের সন্ত্রাস দমন শাখার প্রধান নীল বসু স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সামনে এক সাংবাদিক বৈঠক করেন। তিনি জানান, এটি যে একটি সন্ত্রাসবাদী হামলা সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে আততায়ীর পরিচয় এখনও জানা যায়নি। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি আততায়ী ছাড়া কারও নিহত হওয়ার বিষয়ে কিছু না-বললেও পরে সরকারি সূত্রে জানা যায়, নিহত অন্তত দুই।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের দেওয়া বিবরণ থেকে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুর দু’টো নাগাদ লন্ডন ব্রিজের উত্তর দিকে পথচারীদের উপরে হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ে এক ব্যক্তি। হাতে বিশাল এক ছুরি। এলোপাথাড়ি ছুরি চালাতে থাকে সে। বেশ কয়েক জনের গায়ে-হাতে ছুরির কোপ পড়ে। তখন কয়েক জন পথচারীই চেপে ধরে আততায়ীকে মাটিতে ফেলে দিয়ে তার কাছ থেকে ছুরি কেড়ে নেয়। এর কয়েক মুহূর্ত পরেই সেখানে পুলিশ পৌঁছয়। গুলি করে আততায়ীকে।
আরও পড়ুন: ভারত সফরে গোতাবায়া, পাশে আছি, বার্তা দিয়েও শঙ্কায় দিল্লি
মাটিতে পড়ে থাকা নিরস্ত্র আততায়ীকে কেন পুলিশ গুলি করল, সেই প্রশ্নও উঠছে। তবে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানিয়েছে, আততায়ীর জ্যাকেট দেখে পুলিশ ভেবেছিল, সে ‘সুইসাইড ভেস্ট’ পরে রয়েছে। তাই আরও বড় হামলার আশঙ্কায় দুষ্কৃতীকে গুলি করে তারা। পরে অবশ্য দেখা যায়, হামলাকারী যেটা পরে রয়েছে, সেটি জাল ভেস্ট। পুলিশের অনুমান, আতঙ্ক ছড়াতেই ভেস্টটি পরেছিল আততায়ী। পুলিশ কেন গুলি চালাল, তা নিয়ে একটি পৃথক তদন্ত শুরু করেছে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড।
আতঙ্ক: হামলার পরে হুড়োহুড়িতে পড়ে গিয়েছেন এক জন। শুক্রবার দুপুরে লন্ডন ব্রিজের কাছে। ছবি: এপি
পথচারীদের ভূয়সী প্রশংসা করে লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেছেন, ‘‘আপনাদের সাহসিকতার জন্যই এই হামলা আরও বড় আকার ধারণ করতে পারল না।’’ সাদিক জানিয়েছেন, কয়েক জন আহতের অবস্থা গুরুতর। পুলিশের ভূমিকারও প্রশংসা করেছেন মেয়র। লন্ডনবাসীকে সতর্ক থাকার আর্জি জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘‘উৎসবের এই মরসুমে আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে। কোনও রকম সন্দেহজনক কিছু মনে হলেই পুলিশ বা প্রশাসনকে জানান।
এ দিন সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন জায়গায় ভোটপ্রচারে বেরিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। হামলার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ফিরে এসে গোয়েন্দা-পুলিশের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। পরে টুইট করেন, ‘‘আক্রান্ত ও তাঁদের পরিবারদের সমবেদনা জানাচ্ছি। পুলিশ ও আপৎকালীন পরিষেবাকে ধন্যবাদ।’’ জানান, আজকের মতো প্রচার হন্ধ রাখবে তাঁর দল।
২০১৭-র ৩ জুন এই লন্ডন ব্রিজের উপরেই তিন জঙ্গি একটি ভ্যান নিয়ে পিষে দিয়েছিল পথচারীদের। সেই হামলায় আট জন নিহত হয়েছিলেন, জখম হন ৪৮ জন। পুলিশের গুলিতে নিহত হয় জঙ্গিরা। পরে জানা যায়, আইএসের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল ওই তিন জনের। তার তিন মাস আগে ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজের উপরে প্রথমে গাড়ির ধাক্কা দিয়ে, তার পরে ছুরি নিয়ে হামলা চালিয়েছিল এক জঙ্গি। সে বার আততায়ী-সহ ছ’জন নিহত হয়েছিলেন। আততায়ীকে আইএস মনোভাবাপন্ন ‘লোন উল্ফ’ বলে চিহ্নিত করেছিল লন্ডন পুলিশ।