Israel-Hamas Conflict

হামাস কোথায়! আল-শিফায় যুদ্ধ অব্যাহত

আল-শিফা হাসপাতালের ডিরেক্টর মহম্মদ আবু সালমিয়ার দাবি, ইজ়রায়েল ক্রমাগত মিথ্যা কথা বলছে। হাসপাতালের ভিতর থেকে ইজ়রায়েলি সেনাদের লক্ষ্য করে কেউ গুলি চালায়নি। এখানে কোনও জঙ্গি নেই।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৪০
Share:

গাজ়া স্ট্রিপে এখন হাতে গোণা কয়েকটি হাসপাতাল ধুঁকতে ধুঁকতে চলছে। —ফাইল চিত্র।

চব্বিশ ঘণ্টার উপরে যুদ্ধ চলছে গাজ়ার আল-শিফা হাসপাতালে। ‘হামাস বনাম ইজ়রায়েলি
সেনার’ লড়াই। ঘনঘন ট্যাঙ্ক থেকে গোলা ছোড়া হচ্ছে। আকাশপথে হামলাও অব্যাহত। যদিও এখনও পর্যন্ত আল-শিফা হাসপাতালের সঙ্গে হামাস-যোগের কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেনি ইজ়রায়েল। গাজ়ার এক সাংবাদিকের দাবি, কোনও কিছু প্রমাণ করতে না পেরে ওরা তাণ্ডব শুরু করেছে। বুলডোজ়ার দিয়ে হাসপাতালের দেওয়াল ভাঙছে। অস্ত্রোপচারের জন্য নির্দিষ্ট ভবনটি ভয়াবহ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। হাসপাতালের প্রতিটি ফটকে সেনানিয়োগ করে সাধারণ মানুষকে ‘বন্দি’ করা হয়েছে। হাসপাতালের যে গুদামঘরগুলোতে ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী মজুত করে রাখা থাকে, সেগুলো বোমা ফেলে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্তত ২০০ জনকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। তাঁরা কোথায়, কেউ জানে না!

Advertisement

আল-শিফা হাসপাতালের ডিরেক্টর মহম্মদ আবু সালমিয়ার দাবি, ইজ়রায়েল ক্রমাগত মিথ্যা কথা বলছে। হাসপাতালের ভিতর থেকে ইজ়রায়েলি সেনাদের লক্ষ্য করে কেউ গুলি চালায়নি। এখানে কোনও জঙ্গি নেই। তিনি বলেন, ‘‘রোগীদের ছেড়ে কোথাও যাব না। মরতে হলে সবাই একসঙ্গে মরব। জলের কষ্ট ক্রমশ বাড়ছে। ইজ়রায়েলি সেনা জলের লাইন ভেঙে দিয়েছে।’’

ইজ়রায়েল ছাড়া একমাত্র আমেরিকা এখনও বলছে, আল-শিফা হাসপাতাল হামাসের প্রধান ঘাঁটি। কিন্তু তা সত্ত্বেও যে ভাবে ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) হামলা চালাচ্ছে, তাকে সমর্থন জানাতে রাজি হয়নি ওয়াশিংটন। এ দিন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইজ়রায়েলের ‘সাবধান’ হওয়া উচিত। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে আজ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাশ হয়েছে। যদিও ইজ়রায়েল তা মানতে নারাজ। রাষ্ট্রপুঞ্জে ইজ়রায়েলের দূত গিলাড এরডান বলেছেন, ‘‘এই প্রস্তাবের কোনও অর্থ হয় না। বাস্তবের সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই।’’

Advertisement

গাজ়া স্ট্রিপে এখন হাতে গোণা কয়েকটি হাসপাতাল ধুঁকতে ধুঁকতে চলছে। দক্ষিণ গাজ়ার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান আহমেদ আল-ফারা জানিয়েছেন, উত্তর ও মধ্য গাজ়া থেকে দলকে দল লোক ইজ়রায়েলের নির্দেশে দক্ষিণে চলে আসছে। এখানে তাই গিজগিজ করছে রোগী। আহমেদ বলেন, ‘শিশুদের জন্য এতটুকু পানীয় জল বেঁচে নেই। অপরিশোধিত জল খেয়ে পেটের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কলেরা, টাইফয়েড মহামারির আকার নেবে এ বার।’’ জ্বালানি নেই। লোকজন আবর্জনা পুড়িয়ে সেই আগুনে রান্না করছেন। এর ফলে বায়ুদূষণ মাত্রা ছাড়িয়েছে। ‘ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজ়মা’-য় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। এর মধ্যে খবর ছড়িয়েছে, খান ইউনিসে লিফলেট ফেলা শুরু করেছে আইডিএফ। তাতে দক্ষিণ গাজ়া ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে প্যালেস্টাইনিদের। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, তারা কোথায় যাবেন!

দক্ষিণ গাজ়ার রাফা সীমান্তের কাছে আল-হিলাল হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রীর অভাব সব সীমা ছাড়িয়েছে। ডাক্তারদের সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে, কোন অন্তঃসত্ত্বা মা কিংবা সদ্যোজাত শিশুকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হবে, আর কাকে করা হবে না। কারণ একাধিক রোগীর জন্য হয়তো একটাই ওষুধ পড়ে। রাফার এই হাসপাতালেও শীঘ্র জ্বালানি ফুরোবে। রাষ্ট্রপুঞ্জের অনুমান, বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেলে অন্তত ৫০ হাজার অন্তঃসত্ত্বা মহিলা বিপাকে পড়বেন। ইতিমধ্যেই জ্বালানির অভাবে রাফায় নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দূষিত নোংরা জল বইছে রাস্তার উপর দিয়ে। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার বিষয়ক দফতরের প্রধান ভলকার টুর্ক আজ বলেছেন, ‘‘মহামারি ও দুর্ভিক্ষ অনিবার্য, কেউ আটকাতে পারবে না।’’


আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement