রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের উৎখাতে মায়ানমারের সেনাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দেওয়ার পরে মায়ানমারের রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটরকে সরিয়ে নিল রাষ্ট্রপুঞ্জে।
গত কাল রাষ্ট্রপুঞ্জের নতুন একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘মায়ানমারের সেনা সুপরিকল্পিত ভাবে অভিযান চালিয়েছে, যাতে রোহিঙ্গাদের শুধু মায়ানমারকে থেকে উৎখাতই নয়, তাদের ফেরত আসার রাস্তাও বন্ধ করে দেওয়া যায়।’ বলা হয়েছে, ‘রোহিঙ্গাদের এমন ভাবে মানসিক আঘাত করা হয়েছে যে তাঁরা দেশে ফেরার কথা ভাবলে শিউরে উঠবেন।’ এর পরে বৃহস্পতিবার মায়ানমারে রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটর রেনাটা লক-ডেসালিয়েনকে এ মাসের মধ্যেই দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, জাতিগত সংঘর্ষে উত্তপ্ত মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রাষ্ট্রপুঞ্জকে মানবিক কাজ করায় ক্রমাগত বাধা দিয়ে এসেছেন তিনি।
রাষ্ট্রপুঞ্জের এক কর্তার কথায়— রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ দূরে থাক, বিষয়টি উল্লেখ করা থেকেও বিরত করতেন রেনাটা। তাঁর যুক্তি ছিল, এর ফলে মায়ানমারে রাষ্ট্রপুঞ্জের কাজ করা দুষ্কর হবে। ওই কর্তা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপুঞ্জের কোনও দল যাতে রাখাইনে না-যায়, সে বিষয়েও সচেষ্ট ছিলেন রেসিডেন্ট কমিশনার। মহাসচিবের দফতর থেকে এর আগেও তাঁকে সতর্ক করা হয়েছিল। এ বার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিই দেওয়া হল।
অগস্টের ২৫ তারিখ থেকে মায়ানমার সেনা রাখাইনে ‘আরসা’ জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পরে অন্তত ৮ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। রোহিঙ্গাদের দেশের নাগরিক হিসেবেই মনে করে না মায়ানমারের শাসকরা।
গোটা বিশ্ব তাদের রোহিঙ্গা বিতাড়ন নিয়ে সরব হলেও মায়ানমার যে তাদের অবস্থান থেকে সরেনি, বুধবার তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন এই দেশের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াং। মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্কট মার্সিয়েলেরে সঙ্গে বৈঠকে মিন বলেছেন, রোহিঙ্গারা আদৌ মায়ানমারের নাগরিক নয়। এ দেশকে টুকরো করার জন্য তারা জঙ্গি কার্যকলাপ চালায়। তাঁর দাবি, রোহিঙ্গা বিতাড়ন ও নির্যাতন নেহাতই সংবাদ মাধ্যমের বাড়াবাড়ি।
বাংলাদেশের কক্সবাজারে এ দিনও কতুপালংয়ের শরণার্থী শিবিরে ত্রাণকাজ পরিদর্শন করেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের। শাসক দল আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদকও ওবায়েদুল। এ দিন তিনি বলেন, মানবিক কারণে বাংলাদেশ সরকার শরণার্থীদের আশ্রয় ও ত্রাণের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু অনির্দিষ্ট কাল এই কাজ টেনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। মায়ানমারকে এই শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতেই হবে।
বেশ কিছু বিতর্কিত মৌলবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও এই অবসরে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে বলে বাংলাদেশি গোয়েন্দারা সরকারকে সতর্ক করেছিল। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে বুধবার তিনটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রান কাজ করায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এই তিন সংগঠনের নাম— মুসলিম এড বাংলাদেশ, ইসলামিক রিলিফ এবং আল্লামা ফজলুল্লা ফাউন্ডেশন। এ বিষয়ে সেনা ও বিডিআরকেও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।