বিনিয়োগ সংস্থা ‘ইলারা ক্যাপিটাল’-এর শীর্ষ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন জো জনসন। ফাইল ছবি।
আদানি গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ছোঁয়া লাগল ব্রিটেনেও। এই ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযোগ রয়েছে, লন্ডনের এমন একটি বিনিয়োগ সংস্থা ‘ইলারা ক্যাপিটাল’-এর শীর্ষ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন জো জনসন। তিনি প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ভাই। তবে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওঠা জালিয়াতির অভিযোগের জন্যই তাঁর এই সিদ্ধান্ত কি না, সে বিষয়ে মুখ খোলেননি জো।
প্রধানত, বিভিন্ন ভারতীয় সংস্থার জন্য বিদেশ থেকে তহবিল জোগাড় করে এই ব্রিটিশ সংস্থাটি। এই সূত্রেই আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগ ইলারার। জানা গিয়েছে, আদানি গোষ্ঠীর এফপিও’র সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল এই সংস্থাটি। এবং আদানি ও ইলারার এই সম্পর্ক শুরু হয় জো-র হাত ধরেই। শীর্ষকর্তা হিসেবে বিষয়টির দায়িত্ব দেওয়া হয় জো-কে। দায়িত্ব গ্রহণ করার সময়ে সংস্থাকে জো জানিয়েছিলেন, আদানি গোষ্ঠীর এফপিও প্রক্রিয়ার অংশ হলে আর্থিক দিক থেকে ইলারা অনেক লাভবান হবে। গত জুনে ইলারা ক্যাপিটালের নন এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেন জো। সংস্থার শীর্ষ পদের দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আশা করি, আমাদের সংস্থা ভারত-ব্রিটেন বাণিজ্য সম্পর্কের অংশীদার হতে পারবে।’’ ইলারা ক্যাপিটালের কর্ণধার রাজ ভট্ট অবশ্য জো-র ইস্তফার বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি।
গত ২৪ জানুয়ারি আমেরিকান সংস্থা ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’ টুইটারে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে দাবি করে, কারচুপি করে এত ধনী হয়েছেন গৌতম আদানি। শেয়ার বাজারে তাঁর বিভিন্ন সংস্থার যা অবস্থান, তার অনেকটাই তৈরি করা, সাজানো। হিন্ডেনবার্গের সেই রিপোর্টের কড়া নিন্দা করে পাল্টা বিবৃতি জারি করলেও তখন থেকেই আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার পড়তে শুরু করে। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে ইলারা ক্যাপিটালের নামও উল্লিখিত ছিল।
আমেরিকান সংস্থাটির এই রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরে ইলারা ক্যাপিটালের কাজকর্ম নিয়েও খোঁজখবর নিতে শুরু করে ব্রিটিশ সরকারের আর্থিক অপরাধ দমন শাখা। ইলারার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, মরিশাস থেকে বেআইনি ভাবে লগ্নি এনে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দর বাড়ানোর চেষ্টা করছে তারা। গত মঙ্গলবার ইলারার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠার পরের দিন, অর্থাৎ বুধবার, তড়িঘড়ি ইস্তফা দেন জো।
ইস্তফার কারণ সম্বন্ধে স্পষ্ট করে কিছু না বললেও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বিতর্ক এড়াতেই জো-র এই পদক্ষেপ। বুধবার ইস্তফা দেওয়ার পরে গত কাল রাতে তিনি এক বিবৃতি জারি করে বলেন, ‘‘ইলারা ক্যাপিটাল আমাকে বার বার আশ্বস্ত করেছে যে, কোনও রকম আইন-বিরুদ্ধ কাজ তারা করেনি। তবে আমি আগে বুঝতে পারিনি, আমাকে যে দায়িত্বদেওয়া হচ্ছে, তা পালন করতে গেলে আর্থিক নীতি বিষয়ে কতটা স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। আমার এ বিষয়ে এতটা সম্যক জ্ঞান নেই। তাই আমি বোর্ড থেকে ইস্তফা দিচ্ছি।’’ পেশায় বিনিয়োগ ব্যাঙ্কার জো জনসন বহু বছর ‘ডয়েচে বাঙ্ক’-এ কাজ করেছেন। সাংবাদিকতা করেছেন কিছু দিন। তা ছাড়া, বরিস জনসনের মন্ত্রিসভায় শিক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। ২০২০ সালে দাদার সুপারিশে নাইটহুড পান জো।
হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের এই রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার আগে বিশ্বের তৃতীয় (কিছু দিনের জন্য দ্বিতীয়) ধনী ব্যক্তি ছিলেন গৌতম আদানি। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপ ও জালিয়াতির অভিযোগ ওঠার পরে থেকেই শেয়ার বাজারে পড়তে থাকে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দাম। বাজারে ছাড়ার পরেও এফপিও তুলে নিতে হয় আদানিকে।