আশরফ গনি ও নরেন্দ্র মোদী ফাইল চিত্র।
ভারত সরকারের ওয়েবসাইটেই রয়েছে, আফগানিস্তানে গণতন্ত্রের স্তম্ভ সংসদ ভবন তৈরি করে দিয়েছিল নয়াদিল্লি। খরচ হয়েছিল মোট ৯৭০ কোটি টাকা। সেই সংসদ ভবনে একটি ব্লক রয়েছে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর নামে। রবিবার পর থেকে সেই ঘরে, সেই ভবনেই দাপিয়ে বেড়াবে তালিবান। এমনই অসংখ্য উদাহরণ ছড়িয়ে রয়েছে আফগানিস্তান জুড়ে। ভারতের অর্থে তৈরি একাধিক প্রকল্প রবিবারের পর থেকে সরাসরি চলে যাবে তালিবান নিয়ন্ত্রণে। ভারতের কর দাতার অর্থে নিজেদের আখের গোছাবে তালিবান।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ সৌরীশ ঘোষ জানালেন, ‘‘শেষ ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানে বিপুল অর্থ ভারত বিনিয়োগ করেছে বা সাহায্য হিসাবে পৌঁছে দিয়েছে। রাস্তা, পরিকাঠামো উন্নয়ন থেকে চাবাহার বন্দর বা সংসদ ভবন, এ সব তৈরি হয়েছে ভারতীয় অর্থ সাহায্যে। তালিবানের অভ্যুত্থানের পর সে সবের কী হবে, এখন সেটাই প্রশ্ন!’’
এ কথা সত্যি, তালিবানি শাসন থেকে গণতন্ত্রের পথে আসার পর, শেষ ২০ বছরে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার আফগানিস্তানে বিনিয়োগ করেছে ভারত। এই বিনিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের আমল থেকে। সৌরীশ বলছেন, ‘‘আমি গবেষণার কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, মনমোহনের আমল থেকে যে বিপুল বিনিয়োগ আফগানিস্তানে শুরু করে ভারত, তা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।’’ তার প্রমাণও স্পষ্ট। মোদী একাধিকবার আফগানিস্তানে গিয়েছেন। সে দেশের সংসদ ভবনে বাজপেয়ীর নামে একটি ব্লকের উদ্বোধন করেছেন। শুধু তাই নয়, হেরাট প্রদেশে সালমা জলাধারের উদ্বোধন হয়েছে তার হাতেই, ২০১৬ সালে। নামকরণ হয়েছে ভারত-আফগান বন্ধুত্বের জলাধার। কয়েকদিন আগেই সেই জলাধারের এলাকা দখল করেছে তালিবান।
অটলবিহারী বাজপেয়ী
শুধু তাই নয়, ভারত সরকার আফগানিস্তানকে ২০০টি মিনিবাস, ৪০০ বাস, ১০৫ সরকারি গাড়ি, ২৮৫টি সেনার গাড়ি, পাঁচটি শহরে ১০টি অ্যাম্বুল্যান্স, তিনটি এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান উপহার হিসাবে দিয়েছিল। তৈরি করে দিয়েছিল জরঞ্জ-দেলারাম সড়ক, যাতে খরচ হয়েছিল প্রায় ১৫ কোটি ডলার। এই রাস্তাই এখন আফগানিস্তানের মূল যোগাযোগের মাধ্যম। দক্ষিণের কন্দহর, পশ্চিমের গজনী ও কাবুল, উত্তরের মাজার-ই-শরিফ ও পশ্চিমের হেরাটের মধ্যে এই রাস্তা যোগাযোগ তৈরি করেছে। এটি তৈরি করেছেন ৩০০ ভারতীয় ইঞ্জিনিয়র। কাজ চলাকালীন তাঁদের মধ্যে ১১ জনের মৃত্যুও হয়েছে। ২০ বছরের এই বন্ধুত্বে কি এ বার ইতি পড়বে?
সৌরীশ বলছেন, ‘‘ভারতের কূটনৈতিক নীতির ব্যর্থতা পরিস্থিতিকে জটিল করেছে। এ কথা তো ঠিক, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আসলে আমার-আপনার করের টাকা। আজ তালিবান ক্ষমতায় এসেছে বলে যদি ভারতের সঙ্গে সে দেশের সমস্ত বাণিজ্যিক সম্পর্ক বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে এতদিনের সুসম্পর্কের মানে কী হবে? পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারকেই। দরকার পড়লে কথা বলতে হবে তালিবানের সঙ্গে।’’