আত্মীয়দের সঙ্গে সোহেল আহমদি ছবি: রয়টার্স
১৯ অগস্ট ২০২১। রাজধানীর দখল নিয়েছে তালিবানরা। আফগানিস্তান ছাড়ার জন্য কাবুল বিমানবন্দরে ঢোকার জন্য হুড়োহুড়ি। ভিড়ের চাপ থেকে রক্ষার করার জন্য বিমানবন্দরের পাঁচিলের কাঁটাতার টপকে নিজের একরত্তি সন্তানকে আমেরিকার সেনার হাতে তুলে দিচ্ছেন বাবা। ওপার থেকে এক সেনা আধিকারিক শিশুটিকে নিয়ে নিচ্ছেন।
কাবুলের সেই দৃশ্য এখনও ভোলেনি দুনিয়া। কিন্তু তার পর শিশুটি আর বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছয়নি। নিখোঁজ হয়ে যায় সে। সোহেল আহমদি নামে সেই শিশুটির খোঁজ পাওয়া গেল অবশেষে কাবুলেই।
২০২১ সালের অগস্ট মাসে শিশুটি যখন নিখোঁজ হয়, তখন তার বয়স ছিল দু’মাস। হামেদ সাফি (২৯) নামে এক ট্যাক্সিচালক তাকে খুঁজে পায় কাবুল বিমানবন্দরে। সে-ই তাকে বাড়ি নিয়ে যায়। হামেদের কথায়, ‘‘খুব খারাপ অবস্থায় কাবুল বিমানবন্দরে শিশুটিকে পড়ে থাকতে দেখি। তাকে উদ্ধার করে অনেককে দেখাই। কিন্তু কেউ তার সম্পর্কে কিছু বলতে পারেনি।’’
অগত্যা সেই শিশুকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে নিজের সন্তানের মতোই তাকে দেখভাল করতে থাকেন হামেদ ও তাঁর স্ত্রী ফারিমা সাফি। গত নভেম্বর মাসে শিশুটির ছবি-সহ একটি খবর প্রকাশিত হয় সেখানকার সংবাদমাধ্যমে।সেই খবরের সূত্র ধরেই খোঁজ পাওয়া গিয়েছে শিশু সোহেলের। তবে তাকে পরিবারের হাতে তুলে দিতে গিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। কিছুতেই তাকে ফেরত দিতে চাননি হামেদ এবং তাঁর স্ত্রী।
অগত্যা সোহেলের দাদু হামেদের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। প্রায় সাত সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তালিবান পুলিশের সঙ্গে আলোচনা চলার পর অবশেষে সোহেলকে তার দাদুর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু বাবা-মার থেকে এখনও বহু দূরে সোহেল। তার বাবা মির্জা আলি আহমেদি কাবুলের আমেরিকান দূতাবাসে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন। তালিবানরা কাবুলের দখল নিলে তিনি তাঁর স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে বিমানে করে পালিয়ে যান।
নভেম্বর মাসে সংবাদ সংস্থা রয়র্টাসকে এক সাক্ষাৎকারে মির্জা বলেছেন, ‘‘কাবুল বিমানবন্দরের প্রবেশদ্বারের কাছে ভিড়ের চাপ এড়াতে এক আমেরিকান সেনাকর্মীর হাতে ছেলেকে তুলে দিই। কিন্তু ভিড় ঠেলে বাকি চার সন্তানকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেও সোহেলকে আর খুঁজে পাইনি।’’ তারপর তাঁরা বিমানে কোনওক্রমে মাথাগুঁজে আমেরিকা চলে যান। আপাতত সেখানেই রয়েছেন তাঁরা। ফলে সোহেল তার দাদুকে ফিরে পেলেও বাবা-মা’কে কবে পাবে, তা এখনও কেউ বলতে পারছেন না।