‘আমিও শিক্ষক’: ফ্রান্সের স্কুলশিক্ষক খুনের প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ-সমাবেশে। শনিবার রেন শহরে। ছবি: এএফপি
ধর্মীয় ব্যঙ্গচিত্র ছেপে জঙ্গি হানার শিকার হয়েছিল ফরাসি ব্যঙ্গপত্রিকা শার্লি এবদো। সেই ঘটনা নিয়েই ছাত্রদের পড়াতে গিয়ে নিহত হলেন ফ্রান্সের এক স্কুলশিক্ষক। ১৮ বছরের এক চেচেন কিশোর ওই শিক্ষকের মাথা কেটে তাঁকে খুন করে বলে অভিযোগ। পুলিশের গুলিতে নিহত সে নিজেও।
প্যারিসের উত্তর-পূর্বে কনফ্লান্স-সেন্ট-অনরিন এলাকার একটি মাধ্যমিক স্কুলে পড়াতেন ওই শিক্ষক। শুক্রবার ওই অঞ্চলেই এরানি-সুর-ওয়েজ় নামে একটি জায়গা থেকে উদ্ধার হয় তাঁর দেহ। ওইখানেই পুলিশের গুলিতে নিহত হয় চেচেন কিশোরও। পুলিশের দাবি, ছেলেটির হাতে ছিল ছুরি এবং প্লাস্টিক বুলেট ভরা বন্দুক। বারবার বলা সত্ত্বেও সে অস্ত্র পরিত্যাগ না করায় পুলিশ গুলি চালায়। ছেলেটির ভাই, বাবা-মা, দাদু-দিদা-সহ মোট ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফ্রান্সের সন্ত্রাসদমন দফতর থেকে জানানো হয়েছে, শিক্ষক-হত্যার এই ঘটনাকে তাঁরা সন্ত্রাসের মামলা হিসেবেই দেখছেন। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ-ও বলেছেন, ‘‘এটা ইসলামি সন্ত্রাসের হামলা।’’
ধর্মীয় ব্যঙ্গচিত্র ছেপে ২০১৫ সালেই ভয়াবহ জঙ্গি আক্রমণের শিকার হয়েছিল শার্লি এবদো। গত মাসেও এক পাকিস্তানি যুবক শার্লির পুরনো অফিসের সামনে দু’জনকে ছুরির আঘাতে জখম করে। সম্প্রতি ২০১৫-র জঙ্গি হামলার বিচারপর্ব শুরু হয়েছে। শার্লি এবদো-ও ফের সেই ছবি ছেপে তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা ঘোষণা করেছে। সুতরাং সব মিলিয়ে ব্যঙ্গচিত্র বিতর্ক নতুন করে দানা বাঁধছিলই ফ্রান্সে।
দিন দশেক আগে শ্রেণিকক্ষে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে পড়াতে গিয়ে শার্লি এবদোর ঘটনার কথা টেনে এনেছিলেন শিক্ষক। বিতর্কিত ছবিগুলোও ক্লাসে দেখিয়েছিলেন। নর্ডিন শাওয়াদি নামে স্কুলের এক অভিভাবক জানাচ্ছেন, ছবি দেখানোর আগে ওই শিক্ষক ক্লাসের মুসলিম পড়ুয়াদের বাইরে যেতে বলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘আমি চাই না তোমাদের ভাবাবেগে আঘাত লাগুক!’’ যদিও কিছু মুসলিম অভিভাবক এ নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন। ওই শিক্ষককে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল বলেও পুলিশের দাবি।
প্রেসিডেন্ট মাকরঁ অবশ্য স্পষ্ট বলেছেন, ‘‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বিশ্বাস করার এবং না করার স্বাধীনতা নিয়ে শিক্ষাদান করতে গিয়েই আমাদের এক দেশবাসীকে খুন হতে হল।’’ ইসলামি কট্টরপন্থীদের ব্যাপারে এমনিতেও তাঁর সরকার একটি নতুন বিল আনতে চলেছে।