Russia Ukraine War

Russia-Ukraine Conflict: ডিগ্রি যাক, প্রাণ থাক! বলছেন কিভ থেকে হাঙ্গেরি সীমান্তে পালিয়ে আসা হাওড়ার রোহন

কিভ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিলেন রোহন। ৬ বছরের প্রশিক্ষণ। সেই প্রশিক্ষণ শেষ হতে আর মাত্র তিনমাত্র তিনমাস বাকি। তার পর পুরোদস্তুর চিকিৎসক হয়ে যাবেন। সবই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু হঠাৎ শুরু হল যুদ্ধ।

Advertisement

সারমিন বেগম

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২২ ২১:৩৫
Share:

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ

ডাক্তারি ডিগ্রি পেতে আর তিনমাস বাকি ছিল। কিন্তু মাথার উপর যখন উড়ে বেড়াচ্ছে বোমারু বিমান, মুহুর্মুহু শোনা শোনা যাচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র ফাটার শব্দ, তখন আপনি বাঁচলে ডিগ্রির নাম—এই কথাটাই ভয়ঙ্কর সত্যি হাওড়ার বাসিন্দা রোহন আজাদ লস্করের কাছে।

Advertisement

কিভ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিলেন রোহন। ৬ বছরের প্রশিক্ষণ। সেই প্রশিক্ষণ শেষ হতে আর মাত্র তিনমাত্র তিনমাস বাকি। তার পর পুরোদস্তুর চিকিৎসক হয়ে যাবেন। সবই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু হঠাৎ শুরু হল যুদ্ধ। থেকে থেকেই আকাশের বুক চিরে তীব্র শব্দ করে উড়ে যাচ্ছে বোমারু বিমান। বেজে উঠছে সাইরেন। তবুও রোহন সহ প্রায় ১৫০ ভারতীয় ছাত্র থেকে গিয়েছিলেন হোস্টেলে। কেন? তাঁর কথায়, ‘‘অফলাইন ক্লাস চলছিল। শহরে যে দিন প্রথম বোমা পড়তে শুরু করে তার আগের দিনও ক্লাসের কাজ জমা দিতে হয়েছে। পরদিন ভোর চারটে পঁয়তাল্লিশ নাগাদ বোমার শব্দে ঘুম ভাঙে। পর পর দশটি বোমার শব্দ শুনতে পাই।’’ কিন্তু তার পরও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বলছিল ক্লাস যেমন চলছে তেমনই চলবে। রোহন বলে চলেন, ‘‘এখানে অনেক নিয়ম একশ শতাংশ ক্লাস করতে হয়। না হলে ডিগ্রি পাওয়া যাবে না। যে হেতু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে যেতে বলেনি তাই আমরা যেতে পারছিলাম না।’’

উজোরোদের বাসে ওঠার আগে। ছবি রোহন আজাদ লস্কর

কিন্তু নাগাড়ে বোমা পড়তে শুরু করলে তাঁরা সিদ্ধান্ত বদল করে ফেলেন। কিভ শহর ছেড়ে নিকটবর্তী সীমান্তে যাওয়ার জন্য কলেজ হস্টেল থেকে রোহনরা ৫০ জন বেরিয়ে পড়েন। নির্কতবর্তী স্টেশনে এসে চক্ষু চড়ক গাছে। গাদাগাদি ভিড়। পণ্যঠাসা ট্রেনে বস্তা ঠেসে দেওয়া মতো নিজের শরীরটাকে কোনও রকমে গুঁজে দিয়ে ট্রেনে উঠে পড়েন রোহনরা। তার পর ন’ঘণ্টার যাত্রা। পোল্যান্ডের সীমান্ত লিভে পৌঁছে তিন-চার ঘণ্টার লম্বা লাইন দেওয়ার পর জানানো হল, ওখান থেকে শুধু ইউক্রেনীয় শিশু এবং মেয়েদের পার করানোর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বিদেশিদের জন্য কোনও জায়গা নেই। রোহনের কথায়,‘‘ আমরা বুঝতে পারলাম ওখানে দিয়ে পার হওয়া যাবে না। তাই পরিকল্পনার বদল এনে ৭ ঘণ্টা দূরে হাঙ্গেরির উজোরোদ সীমান্ত দিয়ে পার হাওয়ার জন্য রওনা দিলাম।’’

Advertisement

তাঁরা নিজেরাই বাসে করে উজোরোদ রওনা দেন। রোহন বলেন,‘‘ তখনও দূতাবাস থেকে কোনও সাহায্য পাইনি। ইউক্রেনীয়রাই খাবার, চা, কফি দিয়েছেন। মাইনাস ন’ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা। আগুন জ্বালিয়ে নিজেদের গরম রাখতে হচ্ছিল। জ্বালাতেও সাহায্য করেছিলেন ইউক্রেনবাসীরা।’’

রেল স্টেশনে ছবি রোহন আজাদ লস্কর

ফোনে কথা বলতে বলতে গলা কাঁপছিল রোহনের। উৎকণ্ঠার কম্পন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো কোনওমতে বেরিয়ে এসেছিলাম কিভে যাঁরা থেকে গিয়েছিলেন পরে তাঁরা কেউ আর ট্রেনে উঠতেই পারেননি। বাড়িতে ফোন করে একজনের মৃত্যুর খবর পেলাম। খুব খারাপ লাগছে। জানি না বাকিদের কী হবে।’’ তিন-চারদিন বাঙ্কারেও কাটাতে হয়েছে রোহনদের।

তবে এখন কিছু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন তাঁরা। ভারতীয় দূতাবাস যোগাযোগ করেছে। তারাই ওঁদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করবে বলে জানিয়েছে।

আর বিশ্ববিদ্যালয়? ওখানে পড়ে আছে উচ্চমাধ্যমিক-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার শংসাপত্র। রোহন বলে, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিককে ওগুলোর জন্য মেসেজ করলে বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই দয়া করে মেসেজ করবেন না। এখন আর ও সব নিয়ে আর ভাবছি না। আগে তো প্রাণ বাঁচুক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement