জঙ্গল সাফারিতে গিয়ে যদি ভয়ঙ্কর বিপদে পড়েন! একটি দাঁতাল তার শক্তিশালী শুঁড় দিয়ে যদি আপনার গাড়ি উল্টে দিতে সচেষ্ট হয়! এ রকম ঘটনার ভেবেই শিউরে উঠতে হয়। বাস্তবে এ রকম অভিজ্ঞতার সাক্ষী যাঁরা হয়েছেন, তাঁদের কাছে সেই দিন সারাজীবন দুঃস্বপ্ন হয়েই রয়ে যাবে। প্রাণ হাতে নিয়ে ওয়াইল্ড লাইফ চিত্রগ্রাহকেরা সেই সমস্ত মুহূর্ত আমাদের কাছে পৌঁছে দেন। দাঁতালের আক্রমণ হোক বা হাঙরের হামলা কিংবা দুই বিশালাকার বাঘের এলাকা দখলের লড়াই— সেই সমস্ত ছবি দেখে শিউরে উঠবেন।
সম্প্রতি ইটালির সিয়েনায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক স্থির চিত্র প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন বিশ্বের সমস্ত প্রান্তের চিত্রগ্রাহকেরা। তাঁদের তোলা কয়েকটি ছবি তুলে ধরা হল এই প্রতিবেদনে।
ছবিটির ক্যাপশন ‘এটা আমার জঙ্গল’। একটি বন্য হাতি গাড়ি ভর্তি পর্যটককে হামলা করেছিল। শ্রীলঙ্কার ইয়ালা জাতীয় অরণ্যে ছবিটি তোলা। এই ছবির মাধ্যমে চিত্রগ্রাহকের বার্তা, ‘প্রকৃতিকে সম্মান করা উচিত। জঙ্গলে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ না করাই শ্রেয়। বন্যপ্রাণীদের সমস্যা তৈরি হয় এ রকম কিছু যেন না করি, সে বিষয়ে অতি সতর্ক থাকা প্রয়োজন আমাদের।’ ছবি সৌজন্য: সিয়েনা ইন্টারন্যাশনাল ফটো অ্যাওয়ার্ড ২০২১।
ভারতের রণথোম্বর জাতীয় অরণ্য। দুই বাঘের লড়াই। চিত্রগ্রাহকের বার্তা, ‘সৌভাগ্য, যে তাদের একটি ফ্রেমে আনতে পেরেছি আমি। ছবিটি দেখে মনে হতে পারে সাত পায়ের একটি বাঘ।’ এই জন্যই ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘ঈশ্বর’। ছবি সৌজন্য: রাহুল সচদেব, সিয়েনা ইন্টারন্যাশনাল ফটো অ্যাওয়ার্ড ২০২১।
প্রকৃত অর্থেই জীবনযোদ্ধা তিনি। এই শিশুটির বাবা মুনজির সিরিয়ার ইদলিব বাজারে যাওয়ার সময় বোমা বিস্ফোরণে নিজের ডান পা হারিয়ে ফেলেছিলেন। তাঁর ছেলে মুস্তফা আবার জন্ম নিয়েছে হাত-পা হীন ভাবেই। ‘টেট্রা-অ্যামেলিয়া’ নামে একটি জিনগত রোগের কারণেই এমন অবস্থা তাঁর। শিশুটি এই রোগের শিকার হয়েছে আরও এক ভয়াবহ কারণে। সিরিয়ার যুদ্ধের সময় ‘নার্ভ-গ্যাস’ হামলায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তাঁর মা। তখন কড়া ওষুধ খেতে হয়েছিল। সেই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতে ‘টেট্রো-অ্যামেলিয়া’ রোগাক্রান্ত শিশুর জন্ম দেন তিনি। ছবি সৌজন্য: মেহমত আসলান, সিয়েনা ইন্টারন্যাশনাল ফটো অ্যাওয়ার্ড ২০২১।
আকাশ ভেদ করে যেন কোনও ভিন্গ্রহী যান নেমে আসছে। প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল ঘূর্ণিঝড়। আমেরিকার কানসাসের উপর তখন জট পাকাচ্ছিল সে। এই বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে ছবি নেওয়া দুঃসাধ্য কাজ। চিত্রগ্রাহক সেটাই সম্ভব করে তুলেছেন। ছবি সৌজন্য: লরা হেডিয়েন, সিয়েনা ইন্টারন্যাশনাল ফটো অ্যাওয়ার্ড ২০২১।
সিংহটিকে জড়িয়ে ঘুমোচ্ছে না হাতিটি। সিংহটির শ্বাসরোধ করে মারা চেষ্টাও করছে না। বরং সিংহের সামনে না চাইতেই বড় সুযোগ এনে দিয়েছে সে। রোগাক্রান্ত হয়ে হাতিটির মৃত্যু ঘটেছে আগেই। সিংহের কাছে তাই অফুরন্ত খাবারের সম্ভার। একটি স্ত্রী সিংহের রোজ অন্তত পাঁচ কেজি এবং পুরুষ সিংহের সাত কেজি মাংসের প্রয়োজন। হাতি ওজন এর চেয়ে অনেক বেশি। ছবি সৌজন্য: রোয়ি গালিটজ্, সিয়েনা ইন্টারন্যাশনাল ফটো অ্যাওয়ার্ড ২০২১।
কোনও কাজ নির্ভুল করে তোলার একমাত্র উপায় অনুশীলন। বারবার অনুশীলনের মাধ্যমেই একমাত্র নির্ভুল হওয়া সম্ভব। এই শাবক সেই চেষ্টাই করছিল। পিছন থেকে মায়ের ঘাড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার অনুশীলন। শিকার ধরার সময় যাতে লক্ষ্যচ্যুত না হয়। চিলির প্যাটাগোনিয়ার একটি জাতীয় অরণ্যের ছবি। ছবি সৌজন্য: অমিত এসহেল, সিয়েনা ইন্টারন্যাশনাল ফটো অ্যাওয়ার্ড ২০২১।
মাস খানেক আগে শিকার করা হয়েছিল এই প্রাণীটিকে। পেট ভরে খেয়ে তখনের মতো চলে গিয়েছিল শিকারিরা। কিন্তু ফেলে যাওয়া শিকারকে ভুলে যায়নি। চিত্রগ্রাহকও সেই মুহূর্তের সন্ধানে ক্যামেরা তাক করে বসেছিলেন মাঝের এই দীর্ঘ সময়। একমাস পর শরীরে পচন ধরা শিকারকে খেতে ফের ফিরে আসে দশ নেকড়ের একটি দল। ক্যামেরা তখন লুকনো ছিল শিকারের পাঁজরের হাড়ের মধ্যে। ছবি সৌজন্য: রোনান ডোনোভ্যান, সিয়েনা ইন্টারন্যাশনাল ফটো অ্যাওয়ার্ড ২০২১।
অনেকেই তিমির দেখা পাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এই মহিলাকে সে স্বপ্ন দেখতে হয়নি। স্বয়ং তিমিই তাঁকে দেখা দিয়ে গিয়েছিল। রাশিয়ার ওখোটস্ক-এর সমুদ্রে তোলা ছবি। ছবি সৌজন্য: মাইক করোসটেলেভ, সিয়েনা ইন্টারন্যাশনাল ফটো অ্যাওয়ার্ড ২০২১।