—ছবি সংগৃহীত।
দেশ-জাতির পরিচিতি বদলের যাত্রায় বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে আফগানিস্তানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মিউজিক। এক সপ্তাহ হতে চলল সে দেশে তালিবানি শাসন শুরু হতেই শিল্পীদের আশঙ্কা, প্রতিষ্ঠানের দরজায় তালা ঝোলা এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা। শৈশবের মারণ-হুমকির দাগ মুছে ফেলে সাম্প্রতিক কালে বিশ্বমঞ্চে রবাব-সেতার-ক্ল্যারিনেটে সুর তুলেছেন এই প্রতিষ্ঠানেরই এক ঝাঁক কন্যা। এ বার যেন লহমায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ল ওই তরুণ শিল্পীদের ভবিষ্যত, বিশেষত মহিলাদের। কারণ সঙ্গীত চর্চার মাধ্যমে আফগান মহিলাদের সার্বিক উন্নতিতে বরাবরই জোর দিয়ে এসেছে এই প্রতিষ্ঠান।
তালিবানি রাজত্বে প্রায় সব ধরনেরই সুর শিক্ষা নিষিদ্ধ। প্রায় সমস্ত ধরনের গান-বাজনার চর্চায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল তাদের শাসনকালের প্রথম পর্বে। রবিবার কাবুল দখলের পর তালিবান নেতৃত্ব অবশ্য বলছেন, দ্বিতীয় পর্বে তাঁরা আরও বেশি মানবিক হয়ে উঠবেন। মেয়েদের স্কুল-কলেজে পড়তে দেবেন। শরিয়ত আইন মানলে বাধা থাকবে না কর্মক্ষেত্রেও। কিন্তু বাস্তবে কোনও পরিবর্তন হয়নি। আপাতত গৃহবন্দিই শিল্পীরা, বিশেষত মহিলারা। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ কালপর্বের স্মৃতি ঘেঁটে আফগান শিল্পীরা বলছেন, আবার ফিরে আসতে চলেছে অন্ধকার যুগ। আফগানিস্তানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মিউজিকের প্রধান আহমেদ নাসির সারমাস্তের কথায়, ‘‘এটা দুঃস্বপ্ন। ওরা আর গান-বাজনা করতে দেবে না।’’
কিছু দিন আগেই নিউইয়র্কের প্রসিদ্ধ কার্নেগি হলে পশ্চিমী ধ্রুপদী সঙ্গীতে ঝড় তুলেছিল এই স্কুলেরই মেয়েদের একটি দল। এই স্কুল থেকেই তৈরি হয়েছে আফগানিস্তানের ‘জোহরা’ ব্যান্ড। সুইটজারল্যান্ডে ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম-এর মঞ্চে গান গেয়েছে ‘জোহরা’, সে দেশের প্রথম মহিলা অর্কেস্ট্রা। কিন্তু এই সঙ্গীতচর্চার জন্য বারে বারেই আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে দলের গায়ক-বাদকদের। গান শেখার জন্য ছোট থেকে বেতের আঘাত খেয়ে বড় হয়েছেন আফগানিস্তানের প্রথম মহিলা র্যাপ শিল্পী সোরৌরি। যাঁর গান ‘আমি ভাবতে চেয়েছিলাম, ওরা আমায় মেরেছে’— আজও সেই ইতিহাসের সাক্ষ্যই বহন করে।
সারমাস্ত বলছেন, ‘‘আমাদের ইচ্ছে ছিল বিশ্বের সামনে স্বদেশের অন্য ছবি তুলে ধরা। যা অধরাই থেকে যাবে মনে হচ্ছে…।’’