গুলির শব্দে হঠাৎ স্তব্ধতা নেমে এল সেন্ট্রাল প্যারিসের ব্যস্ত শুক্রবার দুপুরে। এই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিন জন। প্রতীকী ছবি।
গুলির শব্দে হঠাৎ স্তব্ধতা নেমে এল সেন্ট্রাল প্যারিসের ব্যস্ত দুপুরে। শুক্রবার গার দ্য লে স্টেশন লাগোয়া একটি কুর্দিশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের খুব কাছে এই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিন জন। জখম অনেকে। যার মধ্যে চার জনের অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। গুলির আওয়াজ শোনা যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য আগ্নেয়াস্ত্র-সহ ৬৯ বছর বয়সি এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, শুক্রবার বেলা ১২টার কিছুক্ষণ আগে গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে গার দ্য লে স্টেশন লাগোয়া দোকান, রেস্তরাঁ এবং বারে ঠাসা ওই ব্যস্ত অঞ্চল। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকাজুড়ে। এক মহিলা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ‘‘আমরা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ শুনি গুলির শব্দ! পিছনে ঘুরে তাকাতেই দেখি সকলে উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটছেন। পাঁচ—ছ’ মিনিটের মাথায় দেখি লম্বা মতো এক বৃদ্ধকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’’ তিনি সাত থেকে আটটি গুলির শব্দ শুনেছেন বলে দাবি ওই মহিলার।
যদিও অভিযুক্ত কেন এই হামলা চালিয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে। তার কোনও জঙ্গি-যোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, মূলত কুর্দিশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটিকে লক্ষ্য করেই এই হামলাটি চালিয়েছিল অভিযুক্ত। ফলে বিদ্বেষমূলক ভাবনা থেকে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে কি না তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্থানীয় মেয়র আলেক্সান্দ্রা কোর্ডবার জানান, কুর্দিশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি ছাড়াও একটি রেস্তরাঁ এবং একটি সালোঁতেও গুলি চলে। সালোঁর মেঝে থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় দু’জনকে। গোলাগুলির মাঝে জখম হয় অভিযুক্ত বৃদ্ধও। তবে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে এলে সে বাধা দেয়নি বলেই জানা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, অতীতে বিদ্বেষমূলক হামলা চালানোর জন্য হাজতবাসও হয়েছিল অভিযুক্তের। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর প্যারিসের বার্সি অঞ্চলের এক অভিবাসী ক্যাম্পে ঢুকে তরোয়াল নিয়ে হামলা চালিয়ে গ্রেফতার হয় সে। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বরের ওই ঘটনায় সম্প্রতি মুক্তি পায় সে। যদিও এত তাড়াতাড়ি কী করে তাকে মুক্তি দেওয়া হল তা নিয়েও ধন্ধ তৈরি হয়েছে।
২০১৩ সালের জানুয়ারিতে তিন কুর্দিশ মহিলাকে হত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল প্যারিসে। সেই ঘটনার ন’বছরের মাথায় ফের ওই সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে চালানো এই প্রাণঘাতী হামলা না না প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে প্যারিসের মেয়র অ্যান হিডালগোর মন্তব্য, ‘‘এক অতি-দক্ষিণপন্থী এই হামলা চালিয়েছে বলে মনে করছি।... কুর্দেরা যেখানেই থাকুন নিরাপদে এবং শান্তিতে বাঁচুন এটাই আমরা চাই। এটুকুই বলতে চাই, আগের চেয়ে অনেক বেশি করে এখন, এই অন্ধকার সময়ে প্যারিস কুর্দদের পাশে আছে।’’