হত্যাকাণ্ডের পর চার্চ চত্বরে কড়া পুলিশি প্রহরা। ছবি:
প্যারিসের কাছে কনফ্লান্স-সেন্ট-অনরিন এলাকায় শিক্ষককে গলা কেটে খুনের ভয়াবহ স্মৃতি এখনও টাটকা। তার দু’সপ্তাহের মধ্যে ফের একই কায়দায় খুনের ঘটনা ঘটল সেই ফ্রান্সেই। নিসে ঐতিহাসিক নতরদাম গির্জায় এক মহিলার গলা কেটে খুন করা হয়েছে। ধারাল অস্ত্রের আঘাতে নিহত আরও ২ জন। এ ঘটনা ঘটেছে বৃহস্পতিবার। ওই ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসবাদী হামলা’ হিসাবেই দেখছে ফরাসি প্রশাসন।
ফরাসি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন স্থানীয় সময় সকাল ৯টা নাগাদ শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত নতর দাম গির্জার ভিতরে ছুরি নিয়ে ঢুকে পড়ে হামলাকারী। তার পর তাণ্ডবের শুরু। এক মহিলার গলা কেটে খুন করে সে। তার ছুরির আঘাতে প্রাণ হারান আরও ২ জন। আহতও হন অনেকে। তত ক্ষণে গির্জায় ঢুকে পড়ে পুলিশও। তাদের গুলিতে জখম হয় ওই হানাদার। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হামলাকারী কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
হামলাকারী ধরা পড়ার পর গির্জার ভিতরে ঢুকে হতবাক পুলিশকর্মীরা। ফরাসি সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, হিংসার এমন নমুনা দেখে অনেকেই বলে উঠেছেন, ‘ভয়াবহ দৃশ্য’। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন ফ্রান্সের সন্ত্রাস-বিরোধী সংস্থার আধিকারিকরাও। হত্যাকাণ্ডের পিছনে কোনও সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর হাত রয়েছে বলেই মনে করছে ফরাসি প্রশাসন। নিসে যাওয়ার কথা ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁর।
আরও পড়ুন: জঙ্গি-অর্থের উৎস সন্ধানে ফের অভিযানে এনআইএ, দিল্লিতে হানা
হত্যালীলার বর্ণনা উঠে এসেছে নিসের মেয়র ক্রিশ্চিয়ান এস্ত্রোসির টুইটেও। ঘটনার পর পরই তিনি লেখেন, ‘গির্জার ভিতরে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং গির্জার দিকে মুখ করে থাকা একটি থামে লুকিয়ে থাকা এক জনেরও মৃত্যু হয়েছে। যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়’।
আরও পড়ুন: ভারতের হামলার ভয়ে হাঁটু কাঁপছিল সেনাপ্রধানের, অভিনন্দনের মুক্তি প্রসঙ্গে দাবি পাক বিরোধী নেতার
নিসের ঘটনায় ফের বিশ্ব জুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। ঘটনার কিছু ক্ষণের মধ্যেই টুইটারে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মহম্মদ। ধারাবাহিক টুইটে কখনও তিনি বিষোদগার করেছেন। কখনও বিঁধেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্টকে। আবার হত্যাকাণ্ডের স্বপক্ষেও বলেছেন তিনি। যদিও সেই বিতর্কিত টুইট পরে মুছে ফেলা হয়।
ধর্মীয় ব্যঙ্গচিত্র ছেপে ২০১৫ সালে ভয়াবহ জঙ্গি হানার শিকার হয়েছিল ফরাসি ব্যঙ্গপত্রিকা শার্লি এবদো। সেই ঘটনা নিয়েই ছাত্রদের পড়াতে গিয়ে দিন কয়েক আগে নিহত হন ফ্রান্সেরই এক স্কুলশিক্ষক। এক চেচেন কিশোর ওই শিক্ষকের গলা কেটে খুন করে বলে অভিযোগ। পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় সে নিজেও। ওই ঘটনাকে ঘিরে এখনও আরব দুনিয়ার সঙ্গে ফ্রান্সের উত্তেজনার আবহ বজায় রয়েছে। ওই হত্যাকাণ্ডের পর ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে ম্যাক্রঁর মন্তব্যের প্রতিবাদে ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে কুয়েত, জর্ডন, কাতার-সহ একাধিক দেশ। এ দিনের হত্যাকাণ্ড তাতে নতুন মাত্রা যোগ করল।
বছর চারেক আগে জুলাই মাসে ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলার ছবি দেখেছিল এই নিস। বাস্তিল দিবস উদযাপনের দিনে ভিড়ের উপর দিয়েই ১৯ টনের ভারী ট্রাক চালিয়ে দিয়েছিল এক হানাদার। সে দিন ৮৬ জন প্রাণ হারান। আহত হন সাড়ে চারশোর বেশি। সে দিনের রক্তাক্ত স্মৃতি উস্কে দিল নতর দামের হামলা।