ডোনাল্ড ট্রাম্প। — ফাইল চিত্র।
আমেরিকায় জন্মালেই সে দেশের নাগরিকত্ব নয়! ১৫৬ বছরের আইন বদলানোর কথা ঘোষণা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সংক্রান্ত এগজিকিউটিভ অর্ডার (সরকারি নির্দেশনামা)-য় সই করেছিলেন। এ বার এই নিয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা করল বেশ কয়েকটি স্টেট, যেখানে ডেমোক্র্যাটরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনও মামলা করেছে। প্রশ্ন উঠছে, ট্রাম্প কি আদৌ এই আইন বদলাতে পারবেন? সর্বোপরি এই মামলা কি আদৌ তাঁর নির্দেশ আটকাতে পারবে?
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে বসার পরেই বেশ কয়েকটি এগজিকিউটিভ অর্ডারে সই করেছিলেন ট্রাম্প। তার মধ্যে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত এই অর্ডারেও সই করেন তিনি। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই ট্রাম্পের এই এগজিকিউটিভ অর্ডারের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করে অভিবাসীদের সংগঠন আমেরিকার সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন। এর পরে মামলা করেন এক সন্তানসম্ভবা মহিলা। পরে ডেমোক্র্যাটদের নেতৃত্বাধীন ২২টি প্রদেশ এক হয়ে মামলা করে। তাদের সঙ্গে রয়েছে কলাম্বিয়া ডিস্ট্রিক্ট এবং সান ফ্রান্সিসকো শহর। বস্টন এবং সিয়াটলের কোর্টে এই মামলাগুলি হয়েছে। সেখানে আবেদন করা হয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট নিজের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে কাজ করছেন। আমেরিকার মাটিতে জন্মালেই দেশের নাগরিক হওয়া যায়। সংবিধান সেই অধিকার দিয়েছে। সেই অধিকারই খণ্ডন করতে চাইছেন প্রেসিডেন্ট।
ম্যাসাচুসেটসের অ্যাটর্নি জেনারেল আন্দিয়া জয় ক্যাম্পবেলের দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, ট্রাম্পের এই নির্দেশ কার্যকর হলে আমেরিকায় প্রতি বছর জন্মানো দেড় লাখেরও বেশি শিশু নাগরিকত্ব পাবে না।
১৮৬৮ সালে আমেরিকার সংবিধানে ১৪তম সংশোধনী যোগ করা হয়। সেখানে বলা হয়, আমেরিকায় জন্মালেই সেখানকার নাগরিকত্ব মিলবে। ১৯৫২ সালের অভিবাসন এবং জাতীয়তা আইনেও একই কথা বলা হয়েছে। এই ধারারই বিরোধিতা করেছেন ট্রাম্প। তাঁর নির্দেশে বলা হয়েছে, কোনও শিশু আমেরিকায় জন্মালেও যদি তার মা বেআইনি ভাবে সে দেশে বসবাস করেন এবং বাবা আমেরিকার নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা (পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট) হন, তা হলে তাকে নাগরিকত্ব দেবে না আমেরিকা। কোনও শিশুর মা আইনি কিন্তু অস্থায়ী ভাবে যদি আমেরিকায় থাকেন বা পড়ুয়া অথবা পর্যটন ভিসায় আমেরিকায় থাকেন এবং বাবা যদি নাগরিক না হন, তা হলে এ দেশে জন্মালেও সেই শিশু নাগরিকত্ব পাবে না। ট্রাম্পের দাবি, বহু বিদেশি মহিলা আমেরিকায় গিয়ে সন্তানের জন্ম দেন, যাতে সে সে দেশের নাগরিকত্ব পায়।
প্রশ্ন উঠেছে, ট্রাম্পের এই নির্দেশ কি আমেরিকায় নাগরিকত্ব পাওয়ার আইনে বদল আনবে? ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক সাইকৃষ্ণ প্রকাশ বিবিসিকে জানিয়েছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বহু মানুষকে উদ্বেগে রাখবে। তবে এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে আদালত। ট্রাম্প কখনওই নিজে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এই আইনি লড়াই পৌঁছবে সুপ্রিম কোর্টে। শেষে সংবিধান সংশোধন করতে গেলে প্রয়োজন হবে উচ্চ এবং নিম্নকক্ষের মোট সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের ভোট। দুই কক্ষেই রিপাবলিকানদের যথেষ্ট সংখ্যগরিষ্ঠতা নেই। সেনেটে তাদের সদস্য সংখ্যা ৫৩ থেকে ৪৭। হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে রিপাবলিকানদের সংখ্যা ২১৫ থেকে ২২০।